পাইলট আবিদের স্ত্রী লাইফ সাপোর্টে

নেপালের কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটির প্রধান বৈমানিক আবিদ সুলতানের শোকার্ত স্ত্রী আফসানা খানমের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2018, 11:32 AM
Updated : 19 March 2018, 11:33 AM

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজী শফিকুল ইসলাম সোমবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনার অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। রোববার সকালে অপারেশনের পরও উনার অবস্থা খারাপের দিকে ছিল। আমরা উন্নতির আশা করেছিলাম, কিন্তু অবনতি হয়েছে।”

এই চিকিৎসক জানান, তারা আফসানা খানমকে লাইফ সাপোর্টে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। কিন্তু উন্নতির তেমন কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি।

আবিদের বন্ধু মাহিম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার স্ত্রী হাসপাতালে গিয়ে আজ ভাবিকে দেখে এসেছে। তার অবস্থা আরও ক্রিটিক্যাল হয়েছে। তবে ফাইনাল কমেন্ট এখনও করেননি চিকিৎসক।”

আবিদের ভাই মাহমুদ খুরশিদও একজন চিকিৎসক। সোমবার দুপুরে নেপাল থেকে নিহতদের মরদেহ দেশে আনার আগে আগে ইউএস-বাংলার আরেকটি ফ্লাইটে অন্য স্বজনদের সঙ্গে তিনিও দেশে ফিরেছেন।

“আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষ করে আমরা হাসপাতালে খোঁজ খবর নেব। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললেই সর্বশেষ পরিস্থিতি বুঝতে পারব।”

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পারিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। উনার চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল আরও একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে।”

৭১ জন আরোহী নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ১২ মার্চ দুপুরে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার ড্যাশ উড়োজাহাজটি। এতে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি।

দুর্ঘটনার পর ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ক্যাপ্টেন আবিদ আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। কিন্তু পরদিন সকালে ইউএস-বাংলার কর্মকর্তা কামরুল নেপালের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের মৃত্যুর খবর দেন।

আবিদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রথম মৃত্যু সংবাদটি শুনে কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না আফসানা খানম। অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি বেঁচে আছেন জেনে একটু স্বাভাবিক হন।

“কিন্তু পরদিন যখন জানতে পারলেন উনি মারা গেছেন, তারপর থেকে তিনি একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন। আসলে এত বড় শোক সহ্য করতে পারেননি।”

রোববার সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয় আফসানা খানমকে। চিকিৎসকরা জানান, তার স্ট্রোক করেছে। 

একটি মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সহযোগী অধ্যাপক সিরাজী শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আফসানা খানমের অস্ত্রোপচার হয় রোববার। তাকে রাখা হয় আইসিইউতে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। 

ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র আবিদ একসময় বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের বৈমানিক ছিলেন। নেপালের বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফটটি ক্যাপ্টেন আবিদই কানাডা থেকে বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন।

পাঁচ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা থাকা আবিদের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, টানা কাজের কারণে তিনি অবসাদগ্রস্ত ছিলেন কি না বা উড়োজাহাজে ত্রুটি ছিল কি না। ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ দুটো বিষয়ই অস্বীকার করেছে। 

আবিদ সুলতানের ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মীর বরাতে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়, দুর্ঘটনার আগের দিনই ইউএস-বাংলায় পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন এই বৈমানিক। তবে তা গৃহীত হয়নি।

এ বিষয়টিও অস্বীকার করেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার দাবি, আবিদের ইস্তফা দেওয়ার ওই খবর সঠিক নয়।

নেপালে ওই দুর্ঘটনায় আবিদের ফার্স্ট অফিসার পৃথুলা রশিদ এবং কেবিন ক্রু খাজা হোসেন ও শারমিন আক্তার নাবিলাও মারা গেছেন।