৭ দিন পর ফিরলেন তারা কফিনবন্দি হয়ে

কেউ গিয়েছিলেন হিমালয়ের কোলে বেড়াতে, কেউবা পেশাগত কাজে; ঠিক এক সপ্তাহ পর তারা নেপাল থেকে দেশের মাটিতে ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2018, 09:10 AM
Updated : 19 March 2018, 12:08 PM

নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজ সোমবার বিকাল ৪টা ৫মিনিটে কাঠমান্ডু থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিমানবন্দরে নিহতদের মরদেহ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন। বিমান পরিবহন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

উড়োজাহাজ থেকে প্রথমেই নামানো হয় ইউএস-বাংলার প্রধান বৈমানিক আবিদ সুলতানের মরদেহ। তার কফিন একটি অ্যাম্বুলেন্স তোলার পর একে একে অন্যদের কফিনও নামিয়ে আনা হয়।

বিমানবন্দর থেকে কফিনগুলো নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো রওনা হয় বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামের পথে। সেখানেই আত্মীয়, বন্ধু, স্বজনদের সঙ্গে শেষবার মিলিত হবেন না ফেরার দেশের এই ২৩ যাত্রী।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের স্বজনদের মধ্যে যারা কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন, তাদেরও ইউএস বাংলার একটি বিশেষ ফ্লাইটে সোমবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে আগেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে।

এদিকে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা দুপুরের পর থেকেই আর্মি স্টেডিয়ামে জড়ো হতে শুরু করেন। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে স্টেডিয়ামের পরিবেশ।  

২৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা আর্মি স্টেডিয়ামে নিহত ২৩ জনের স্বজনদের দায়িত্ব নেন। মরদেহ হস্তান্তর করার জন্য প্রত্যেকের আলাদা ফাইলে তথ্য সংগ্রহ ও ফরম পূরণের আনুষ্ঠানিকতা এগিয়ে রাখেন তারা।   

ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, কাঠমান্ডু

ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, কাঠমান্ডু

ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১ গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিল চার ক্রুসহ ৭১জন আরোহী নিয়ে, সেদিনও ছিল সোমবার।

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হলে ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৪৯ আরোহীর মৃত্যু হয়।

নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করার পর নেপালি কর্তৃপক্ষ কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। সোমবার সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে প্রবাসী বাংলাদেশি, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ইউএস-বাংলার উপস্থিত কর্মকর্তারা তাদের জানাজায় অংশ নেন।

জানাজা শেষে ২৩টি কফিন পাঠানো হয় সেই ত্রিভুবন বিমানবন্দরে। সেখান থেকেই ঠিক এক সোমবার পর দেশের  পথে তাদের ফিরতি যাত্রা শুরু হয় বেলা আড়াইটায়, বিমানবাহিনীর কার্গো ফ্লাইটে চড়ে।

এই ২৩ জনের মধ্যে ইউএস-বাংলার পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ এবং কেবিন ক্রু খাজা হোসেন মো. শফি ও শারমিন আক্তার নাবিলা রয়েছেন।

আর যাত্রীদের মধ্যে আছেন ফয়সাল আহমেদ, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান, হাসান ইমাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, ফারুক হোসেন প্রিয়ক, তার মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী তামারা, মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানভিন শশী রেজা, বেগম উম্মে সালমা, মো. নুরুজ্জামান, রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা, তাদের ছেলে অনিরুদ্ধ জামান।

ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, কাঠমান্ডু

ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, কাঠমান্ডু

ওই দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে আলিফুজ্জামান, পিয়াস রায় ও নজরুল ইসলামের মরদেহ রোববার পর্যন্ত শনাক্ত করা বাকি ছিল।

নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস সোমবার সকালে বলেন, ওই তিন বাংলাদেশির মধ্যে আরও একজনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে, তবে নেপালি কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। 

“আজ ডিক্লেয়ার হয়ে গেলে আমরা চেষ্টা করব… কাল হয়ত পারব না, পরশু বিমানের ফ্লাইটে আমরা পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। বাকি দুজনের মরদেহ পাঠানো বিষয়টা নির্ভর করবে শনাক্ত করতে কতদিন লাগে তার ওপর। শনাক্ত হলে আমরা একই প্রক্রিয়ায় পাঠিয়ে দেব।”

নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশ চিকিৎসক দলের সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ এর আগে জানিয়েছিলেন, চিহ্ন দেখে বা অন্যভাবে ওই তিনজনকে শনাক্ত করা না গেলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।