শিকুর বাবার দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এস আই ফেরদাউস আহম্মেদ বিশ্বাস রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র দেন।
মহানগর হাকিম আহসান হাবীব প্রতিবেদনটি যাচাই বাছাই করে আগামী ২৫ জুন আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
প্রতিবেদনটি গ্রহণ করা হলে আইন অনুযায়ী আসামি শিমুল (২৬), তার বাবা মকবুল হোসেন (৫২), মা সেলিনা খাতুন (৪৬), বোন সাদিয়া হাসানের (২৪) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে।
আর প্রতিবেদন নিয়ে বাদীর আপত্তি থাকলে তিনি না-রাজি আবেদন জানাতে পারবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান এ আদালতের পেশকার শিশির হালদার।
মামলার বাদী মুন্সী শরীফ হোসেন জানান, গতবছর ১১ জুলাই হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় বিষাক্ত ইনজেকশনের মাধ্যমে আত্মহত্যা করেন তার মেয়ে শিকু (২৬)।
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
সেদিন শুনানি নিয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. খুরশীদ আলম দুটি মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে গুলশান থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ফেরদাউস আহম্মেদ বিশ্বাস তার প্রতিবেদনে বলেছেন, “মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের কোনো মতামত পাওয়া না গেলেও ভিকটিমের মৃত্যুপূর্ব আচরণ, কথাবার্তা, ফেইসবুক ও মোবাইলের মাধ্যমে আসামির সঙ্গে কথোপকথন এবং ঘটনার পরিপার্শ্বিকতা থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে প্ররোচনা ও মানসিক নির্যাতনের কারনে শিকু আত্মহ্ত্যা করেছেন।”
মামলার আরজিতে মুন্সী শরীফ হোসেন বলেন, তার মেয়েকে ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও অন্যায়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করা হয়, যার প্রতিক্রিয়ায় শিকু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং আত্মহত্যা করেন।
শিমুল ও শিকু দুজনেই সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। কলেজ শেষ করে শিকু ইউনাইটেড হাসপাতালে নার্সিংয়ে ভর্তি হন। পরে ওই হাসপাতালেই গত ১২ মার্চ নার্স হিসেবে যোগ দেন তিনি।
আর শিমুল উচ্চ মাধ্যমিকের পর সরকারি তিতুমীর কলেজে ভর্তি হন। সে সময় তিনি থাকতেন নর্দায়। পরে যমুনা ফিউচার পর্কের একটি রেস্তোরাঁয় কাজ পান। সেখান থেকে তিনি নকিয়ায় কাজ নেন বলে শিকুর ভাই মুন্সী সালাউদ্দিন শরীফ জানান।
শিকুদের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার কাশিমপুর গ্রামে। আর শিমুলের গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া থানার পিড়াহাটি পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
শিমুল বিভিন্ন সময়ে শিকুর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেননি অভিযোগ করে মামলার আরজিতে বলা হয়, শিমুল সম্পর্কের এক পর্যায়ে শিকুকে জানিয়ে দেন, তার বাবা-মা কোনো নার্সকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবেন না।
শিকুর বাবা বলেন, “আমার মেয়ের গায়ের রঙ নিয়েও খোঁচা দিয়ে কথা বলত সে। প্রায়ই টাকা ধার নিত, কিন্তু উল্টো বলত, আমরা নাকি গরিব। আমাদের কাছে আমার মেয়ের ও শিমুলের ফেইসবুকের কথাবার্তার রেকর্ড আছে।”
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে শিমুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।