রাজউকের গলদে হুমকিতে ঢাকার ঐতিহ্য: আরবান স্টাডি গ্রুপ

পুরান ঢাকার চারটি অঞ্চলকে ঢাকার ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে ২০০৯ সালে রাজউকের প্রণীত গেজেটে গলদ থেকে যাওয়ায় ‍পুরান ঢাকার নানা স্থাপত্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ এনেছে আরবান স্টাডি গ্রুপ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2018, 03:59 PM
Updated : 16 March 2018, 03:59 PM

২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চারটি অঞ্চলকে ঢাকার ঐতিহ্য বা হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

পুরান ঢাকার মোট ৯৩টি স্থাপনাকে ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে রাজউকের গেজেটে বলা হয়, রাজধানীর মহাপরিকল্পনাভুক্ত এলাকার ঐতিহাসিক, নান্দনিক, বৈজ্ঞানিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব বিবেচনায় আনা হয়েছে।

আরবান স্টাডি গ্রুপ এ তালিকাকে ‘অসম্পূর্ন ও আংশিক’ তালিকা হিসেবে উল্লেখ করে অভিযোগ এনেছে, এ কারণে ঐতিহ্য সংরক্ষণে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

শুক্রবার সকালে ভিক্টোরিয়া পার্ক ও হৃষিকেশ দাস রোডে এক গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে এসব অভিযোগ উঠে আসে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আরবান স্টাডি গ্রুপ।

সূত্রাপুরের হৃষিকেশ দাস রোডের ৪১-৪৩ হোল্ডিং ভবন, শাখারীবাজার, কৈলাশ লেন, রাজার দেউরিসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংসের প্রতিবাদে এই গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয় বলে জানান গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম।

তাইমুর ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৯ সালে প্রণীত তালিকায় শাখারীবাজার, সূত্রাপুর, ফরাসগঞ্জ, রমনা এলাকাভিত্তিক যে পরিকল্পনা প্রণয়ণ করেছিল, তা ২০১৭ সালে এসে বাদ দেওয়া হয়। তালিকায় ৯৩টি ভবনের উল্লেখ থাকলেও সংশোধিত তালিকায় তা ৭৫-এ নামিয়ে আনা হয়। পুরান ঢাকার ১৩টি সড়ককে ঐতিহ্যবাহী এলাকা হিসেবে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করলেও তা প্রত্যাহার করা হয়।

“এ তালিকা প্রণয়ণের পর পুরান ঢাকার অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হারিয়ে যেতে বসেছে।”

নিজেদের কাঁধে ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে রাউজক ঐতিহ্য ধ্বংসে বড় ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তাইমুর বলেন, আরবান স্টাডি গ্রুপ ২০০৪ সালে ঢাকার প্রায় আড়াই আড়াই হাজার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকা তৈরি করে। রাজউক, সিটি করপোরেশন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে তালিকা জমা দিয়ে তারা উপেক্ষিত হন।

২০১২ সালে হেরিটেজ সংরক্ষণের দাবিতে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হলে আদালত ঐতিহ্যবাহী ভবনের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা সংশ্লিষ্টদের জমা দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছরেও সেই তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়নি।

রাজউকের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ তালিকার কারণে ঐতিহ্য সংরক্ষণে জটিলতা তৈরি হওয়ায় স্থাপনার মালিকদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাইমুর।

রাউজকের এই তালিকার কারণে ঢাকার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সংরক্ষণে আইনি জটিলতার কথা বারবার বলে আসছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নানা অনুষ্ঠানে এসে তিনি এই নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছেন। 

গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন আরবান স্টাডি গ্রুপের পরিচালক স্থপতি সামিরা ইসলাম, ইউএসজি ভলান্টিয়ার্সের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক কাজী ইয়াসীন ও ভাস্কর নাথ।

সমাবেশে বক্তারা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত তালিকা প্রণয়নের দাবি জানান। ঢাকা মহানগরীর জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ণের পরামর্শও দেন।

আরবান স্টাডি গ্রুপের অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।