মুক্তিযোদ্ধা সাবেক এই আমলা তার আত্মজীবনীমূলক এই গ্রন্থে নিজের জীবনের বিভিন্ন কালপর্বের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন ‘তরুণ প্রজন্মের জন্য’। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল দিনগুলোর পাশাপাশি হালের জরুরি আমলের ঘটনাপ্রবাহ সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে।
শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই প্রকাশনা উৎসবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ অতিথিরা বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
বইয়ের আলোচনায় প্রধান অতিথি মুহিত বলেন, “শেষ পর্যন্ত আমার মন্তব্য হচ্ছে, ইট ইজ অলমোস্ট পোয়েট্রি। এত সুন্দরভাবে লিখেছেন। ইটস পোয়েট্রি। এত সুন্দর! পড়ার উপযুক্ত এবং উপস্থাপনার ধরণটাও চমৎকার।”
দুটি ঘটনার উপর পুরো বই লেখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ, এপ্রিল মাস, ৭১ সাল। আর আরেকটি হচ্ছে, ২০০৮ সালে তার জেল যাত্রা। এই দুটি একটার পর আরেকটা এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট না করে উপায় থাকতে পারে না। স্টাইল অব প্রেজেন্টেশন ইজ বিউটিফুল।”
সাত দশক পার করা জীবনে সময়ের ছুটে চলাই কেবল দেখেননি তৌফিক-ই-ইলাহী, ছুটেছেন তিনি নিজেও। সাক্ষী হয়েছেন, অংশ হয়েছেন ঐতিহাসিক নানা মুহূর্তের। আর সে সবের নানা ক্ষণ তুলে এনেছেন বইয়ে।
তৌফিক-ই-ইলাহী জন্মেছেন ব্রিটিশ ভারতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার ক্ষত তখনও তরতাজা। সিলেটে তার জন্মস্থানের কয়েকশ’ কিলোমিটার দূরে ভারত-বার্মা সীমান্তে নাগাল্যান্ডের কোহিমায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ঙ্কর বোমা হামলা করেছিল জাপান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চাকরি রেখে যোগ দেন যুদ্ধে। ৮ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তিনি কমিশনপ্রাপ্ত হন। পরে তিনি বীরত্বের জন্য বীর বিক্রম উপাধি লাভ করেন। সচিব হিসেবে কাজ করার পর ২০০২ সালে অবসরে যান। ২০০৯ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হন।
এ সব ঘটনার তিনি কেবল প্রত্যক্ষদর্শীই ছিলেন না, সংগঠক হিসেবে অবদান রেখেছেন নানা পর্যায়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাঙালি জাতির নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ এবং রক্তস্নাত ইতিহাসের উত্তাল সেই সময়ের বাইরেও ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের সময়ের দিকেও।
তার বর্ণনায় উঠে এসেছে, সে সময়কার সরকার নিজেদের মতো করে কথা বলিয়ে তাকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। সেটা অস্বীকার করায় তাকেও মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়।
শুক্রবারের প্রকাশনা উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, কবি হায়াৎ সাইফ, অধ্যাপক আরিফা রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, একাত্তর টিভির বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বইয়ের উপর আলোচনা করেন।
শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে দর্শকপূর্ণ মিলনায়তনে তৌফিক-ই-ইলাহীর একাত্তরের কয়েকজন সহযোদ্ধাও ছিলেন।