ইউএস-বাংলা দুর্ঘটনা: অ্যানিকে ‘জানানো হয়নি’ স্বামী-সন্তানের খবর

নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আলমুন নাহার অ্যানিকে তার স্বামী আলোকচিত্রী ফারুক হোসেন প্রিয়ক এবং তাদের শিশু সন্তান প্রিয়ন্ময়ী তামারার মৃত্যুর খবর এখনও বলেননি স্বজনরা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2018, 01:09 PM
Updated : 16 March 2018, 05:43 PM

অ্যানির সঙ্গে তার প্রিয়কের মামতো ভাই মেহেদী হাসান এবং মেহেদীর স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণাকে শুক্রবার কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় এনে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট।

বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেছেন, এই তিনজনের অবস্থা  মোটামুটি স্থিতিশীল হলেও যেহেতু তারা বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন, সেহেতু এখনই তাদের শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। 

প্রিয়কের বন্ধু জাহাঙ্গীর আলম রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর খবর অ্যানিকে এখনও জানানো হয়নি।

“আজ কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ থেকে বের হওয়ার পর জানতে চেয়েছিল- তারা কোথায়। ওকে বলা হয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রিয়ক আর তামারাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হচ্ছে।”

প্রিয়কের আরেক বন্ধু ইজাজ আহমেদ মিলন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, অ্যানি কিছুক্ষণ পর পর মেয়েকে দেখতে চাইছেন।

“আমরা বলেছি, তাদের অবস্থা আরও খারাপ, সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। তুমি দেশে ফিরে চল, সেখানে চিকিৎসার পর প্রয়োজনে তোমাকেও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। তবে অ্যানি মেয়ের জন্য খুবই বিচলিত। বার বার বলছে- ‘ওকে একটু দেখি, ওকে খাওয়াতে হবে’।”

পাঁচ দিন কাঠমান্ডু মেডিকেলে চিকিৎসার পর অ্যানি, স্বর্ণা আর মেহেদী বাংলাদেশে বিমানের একটি ফ্লাইটে যখন ঢাকায় পেঁছালেন, তাদের দেখতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

ওই তিনজন ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছানোর পর সেখানে যান বিমানমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল; তার কাছেও মেয়ের খোঁজ জানতে চাইলেন অ্যানি।

তিনি বলছিলেন, “আমার মেয়েটা কিন্তু ছোট, একা খেতে পারে না্ ওদের অবস্থা কি বেশি খারাপ? কখন সিঙ্গাপুরে পাঠাবেন আপনারা?”

সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টায় বিমানমন্ত্রী তাকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেন; বলেন, সব ঠিকঠাক খেয়াল রাখা হবে। 

ব্যবসায়ী মেহেদী আর আলোকচিত্রী প্রিয়ক সম্পর্কে মামাতো-ফুপাতো ভাই। তাদের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরের নগর হাওলা গ্রামে।

দুই পরিবারের পাঁচজন মিলে গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১ তে নেপাল যাচ্ছিলেন তারা। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হলে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন বাংলাদেশি।

বিধ্বস্ত হওয়ার পর উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যাওয়ায় অধিকাংশ মরদেহ পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। তাদের সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় লাশ হস্তান্তরও বিলম্বিত হচ্ছে। 

মেহেদীর চাচাতো ভাই মাহবুব আলম ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মর্গে গিয়ে লাশ দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেয়নি। আমরা বলেছিলাম, যাত্রীদের মধ্যে বাচ্চা আছে মাত্র দুটো, একটা ছেলে একটা মেয়ে। আমরা তো আমাদের মেয়েটাকে চিনতে পারতাম। কিন্তু তারপরও তারা দেখতে দেয়নি।”