মাথা, পিঠ ও হাতের জখম নিয়ে ১২ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার পর বুধবার সকালে ছাড়া পান জাফর ইকবাল।
সিলেটে ফিরে বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে বক্তব্য দেন তিনি, যেখানে গত ৩ মার্চ উগ্রপন্থি তরুণ ফয়জুল হাসান ওরফে শফিকুরের ছুরি হামলার শিকার হয়েছিলেন।
উগ্রপন্থিদের নিয়ে জনপ্রিয় এই লেখক বলেন, “একজন মানুষ কতটা দুঃখী হতে পারে যে সে ভাবছে যে, আরেকজন মানুষকে হত্যা করে সে বেহেশতে যেতে পারবে। মানুষের সাথে মানুষের ভালোবাসা,সুন্দর পৃথিবীর কিছুই সে জানে না, কিছুই সে দেখে না।”
সাবেক মাদরাসা ছাত্র ফয়জুলের মতো এই চিন্তা-ভাবনার মানুষ তার আশপাশে আরও অনেক আছে বলে মনে করেন জাফর ইকবাল।
ছাত্র-শিক্ষকদের ওই সমাবেশে তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত সে ছেলে শুধু একা নয়, তার মতো আরও অনেকে আছে, এখানেই হয়ত দাঁড়িয়ে আছে, যে নাকি আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে পারলাম না, আরেকবার ‘এটেম্পট’ নিতে হবে।”
উগ্রপন্থিদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে যদি কোনো বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আস, শুধু অস্ত্রটা বাসায় রেখে এসো, সামনা সামনি আমার সাথে কথা বল প্লিজ, তোমার মনে যে বিভ্রান্তি আছে তা নিয়ে আমার সাথে কথা বল।
“আমি জানতে চাই, আমি শুনতে চাই। কোরআন শরীফে বলা আছে, তুমি যদি একজন মানুষকে মার, তুমি যেন সমস্ত মানবজাতিকে হত্যা কর। তাহলে একজন মানুষ যদি কোরআন শরীফ পড়ে তাহলে কী করে সে একজন মানুষকে হত্যা করে?”
ফয়জুল ছাড়াও তার বাবা-মা, মামা, চাচা ও ভাই গ্রেপ্তার হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এই প্রসঙ্গ তুলে হামলাকারীর উদ্দেশে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, “কে তোমাদের বিভ্রান্ত করে? কে তোমাদের বুঝিয়েছে? যারা তোমাদের বুঝিয়েছে তারা নিশ্চিন্তে আরামে বসে আছে। তাদের ছেলেমেয়েরা লেখা পড়া করছে।
“তুমি যার কথা শুনে এ কাজে নেমেছ, তুমি জেলখানায় আছ, রিমান্ডে আছ। তোমার বাবা-মা-ভাই-বোন রিমান্ডে আছে। এটা কি একটা জীবন হল? কেন এই জীবন বেছে নিয়েছ?”
রক্তাক্ত জাফর ইকবালকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই তাকে পাঠানো হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
সিলেটে ফেরার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন।
জাফর ইকবালের বাঁ হাতে এখনও ব্যান্ডেজ। টুপি পরে ছিলেন তিনি।
পিঠ ও হাতে স্টিচ ১৮ মার্চ খোলা হতে পারে বলে জানান তিনি।
জাফর ইকবালকে এক মাস বেড রেস্টে থাকতে বলেছেন ডাক্তাররা। তবে এক সপ্তাহ থাকতে হবে পুরো বেড রেস্টে। তিনি সিলেট গেছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে। বৃহস্পতিবারই আবার ঢাকা ফিরবেন।