রাগ নেই, ওদের জন্য দুঃখ হয়: জাফর ইকবাল

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশবিদ্যালয়ে এক উগ্রপন্থি তরুণের হামলার শিকার অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, হামলাকারীর ওপর কোনো রাগ নেই, বরং তাদের মত তরুণদের জন্য তিনি দুঃখ অনুভব করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকও সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2018, 06:58 AM
Updated : 14 March 2018, 10:45 AM

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১২ দিন চিকিৎসা শেষে বুধবার সিলেট ফেরার পথে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন জনপ্রিয় এই লেখক।

“তাদের ওপর আমার কোনো রাগ নাই। আমি তাদের জন্য এক ধরনের দুঃখ অনুভব করি। এত সুন্দর পৃথিবী। সেখানে এত সুন্দর সুন্দর কাজ করা সম্ভব। তারা সেগুলো না করে এই ধরনের একটা কাজকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে নিয়েছে, সেজন্য তাদের প্রতি আমি দুঃখ অনুভব করি।”

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন তরুণরা ভুল পথে না যায়, তারা যেন সাধারণ মানুষে মত সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে।

গত ৩ মার্চ বিকালে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠান চলাকালে ফয়জুল হাসান ওরফে শফিকুর নামের এক তরুণ ছুরি হাতে জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায়।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণ বলেন, জাফর ইকবাল ‘ইসলামের শত্রু’ বলে সে মনে করে, এ কারণেই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তিনি হামলা করেন।

রক্তাক্ত অধ্যাপক জাফর ইকবালকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই তাকে পাঠানো হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। 

সিলেটে ফেরার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানান, এখন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন।

“আমার শারীরিক অবস্থা ভাল। আমার মাথায় চারটি আঘাত ছিল। এ কারণে ছেলেমানুষের মত টুপি পড়ে এসেছি, যাতে ওগুলো দেখা না যায়। সেগুলোর স্টিচ খুলে দেওয়া হয়েছে। ডাক্তার এখন রেস্ট করতে বলেছেন।”

তবে পিঠ ও হাতে স্টিচ এখনো খোলা হয়নি। সেগুলো ১৮ মার্চ খোলা হতে পারে বলে জানান তিনি।

ওই হামলার পর সবাই যেভাবে সহযোগিতা করেছে, চিকিৎসকরা যেভাবে যত্ন নিয়েছেন, সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, সবার মাঝে ফিরে আসতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে।

“একটা কথা না বললেই না, আমি কে? আমি একটা ইউনিভার্সিটির মাস্টার, বাচ্চা কাচ্চার জন্য বই লিখি, তাই তো? কিন্তু আমাদের প্রাইম মিনিস্টার, উনি নিজে আমাকে ওখান থেকে হেলিকপ্টারে নিয়ে এসেছেন। উনি এত ব্যস্ত, তারপারও নিজে এসে আমাদে দেখে গিয়েছেন। কেউ যেন আসতে না পারে, আমার যেন ইনফেকশন না হয়, সেজন্য নিজে থেকে উনি সেটা বলে গিয়েছেন।

“আমি কী বলব! আমি উনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই, আমি ডাক্তারদের কৃতজ্ঞতা জানাই, আমি দেশের মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”

এই শিক্ষক জানান, যে মুক্তমঞ্চে তার ওপর হামলা হয়েছিল, সিলিটের ক্যাম্পাসে ফিরে সেই মুক্তমঞ্চেই তিনি ছাত্রছাত্রীদের সামনে আসবেন।

“আমি হয়ত একটু বোকা মানুষ। এজন্য ভয় টয় পাই না। আমার তখনো ভয় করে নাই। ঘটনা যখন ঘটে তখনও ভয় করে নাই। এখনও করছে না। আমি এখনও নিরাপদ বোধ করছি। আমার নিরাপত্তা আসলে পরিচিত মানুষজন। দেশের মানুষ, আমার ছাত্রছাত্রীরা। আর পুলিশ মিলিটারি তো আছেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনোই ভয় পাই না।”

জাফর ইকবাল বলেন, ওই হামলায় দেশে প্রগতিশীলতার ওপর আঘাত এসেছে বলেও তিনি মনে করেন না।

নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের দেশটা খুব সুন্দর, খুব সুইট। তোমরা দেশকে ভালবাসো, দেশও তোমাদের ভালবাসবে।”

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডমেস্টিক টার্মিনালে জাফর ইকবালের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক ও মেয়ে ইয়েশিম ইকবাল। এ সময় তাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল।

বেলা পৌনে ১টায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছে ইয়াসমিন হক সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে যেখানে হামলা হয়েছিল বুধবার বিকাল ৪টায় সেখানে বক্তব্য দেবেন জাফর ইকবাল।

“তাকে একমাস বেড রেস্টে থাকতে বলেছেন ডাক্তাররা। তবে এক সপ্তাহ থাকতে হবে পুরো বেড রেস্টে। তিনি সিলেট এসেছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে। আগামী কালই আবার ঢাকা ফিরে যাবেন।”