ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে স্মরণ

মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর স্মরণে ‘নাগরিক শোকসভা’ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2018, 07:55 PM
Updated : 13 March 2018, 07:55 PM

মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সভায় বক্তরা পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত বীরাঙ্গনা নারীদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রিয়ভাষিণীর লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে শোকসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংবাদিক কামাল লোহানী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, শিল্পী হাশেম খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এস এম মাকসুদ কামাল, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেছেন, সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।”

প্রিয়ভাষিণী সবকিছুর মধ্যেই সৌন্দর্য খুঁজে বের করতেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তার আরেকটি বিশেষ গুণ হল নন্দনতাত্ত্বিক বোধ। সব কিছুর মধ্যে সে সৌন্দর্য খুঁজে বের করত। এটিই তাকে ভাস্কর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাকে আমরা হারিয়েছি বটে, কিন্তু তার চেতনা ও কাজ চিরকাল আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে।”

সত্য ও সুন্দরের উপাসক নারী হিসেবে প্রিয়ভাষিণী সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন মন্তব্য করে কামাল লোহানী বলেন, “সত্য ও সুন্দরের উপাসনা ছিল ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর আরাধ্যের বিষয়। এ কারণেই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সে সংগ্রামের মানসিকতা দেখাতে পেরেছিলেন।

“তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে নারীদের সাহস জুগিয়েছেন। লজ্জা ও শঙ্কাকে দূরে ঠেলে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে গেছেন। তার চলে যাওয়ায় আমরা খানিকটা অভিভাবক শূন্য হলাম। তবে সত্য ও সুন্দরের মহীয়সী নারী হিসেবে আজীবন আমাদের মাঝে বিরাজ করবেন তিনি।”

শিল্পী হাশেম খান বলেন, “তিনি একজন অনন্য মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে কোনো বীর ও সাহসীর তুলনা হয় না। স্বাধীনতার পরে বীরাঙ্গনাদের সমাজ কর্তৃক যে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয় তা থেকে মুক্তির জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন।

“তিনি ছিলেন প্রতিবাদের প্রতীক। স্বাধীনতার চেতনাকে সামনে নিতে সব বাধা ও লাঞ্ছনাকে তুচ্ছ করে এগিয়ে গেছেন। তার আদর্শ ও সংগ্রামের কথা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।”

শোকসভার শুরুতেই নেপালে বাংলাদেশের বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিতা পাঠ করেন কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত।