দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে নেপাল যাচ্ছে বোম্বারডিয়ারের তদন্ত দল

দুর্ঘটনা কবলিত ইউএস-বাংলার কিউ-৪০০ টার্বোপ্রপ উড়োজাহাজের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কানাডার মন্ট্রিয়েল-ভিত্তিক বোম্বারডিয়ার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে।

মনজুর মাহমুদ, টরন্টো থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2018, 07:53 PM
Updated : 13 March 2018, 07:53 PM

এরই অংশ হিসেবে একজন ঊর্ধ্বতন তদন্ত কর্মকর্তাসহ দু’সদস্যের একটি দলের মঙ্গলবার সকালেই নেপালে রওয়ানা হওয়ার কথা কোম্পানির মুখপাত্র ন্যাথালি সিফেংফেট টরন্টো স্টারকে জানিয়েছেন।

বোম্বারডিয়ার নির্মিত কিউ-৪০০ বা ড্যাশ-৮ বৃহৎ প্রপ উড়োজাহাজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চলছে। কোম্পানিটি এ পর্যন্ত ৯০টি দেশে ৫০০’র বেশি কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ সরবরাহ করেছে।

বোম্বারডিয়ারের এই উড়োজাহাজই ছিল বাংলাদেশের বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বহরে, যার সোমবার নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে অবতরণের সময়  বিধ্বস্ত হয়ে অর্ধশত নিহত হন।

দুর্ঘটনার জন্য বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে বৈমানিকের ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে: বিষয়টি তদন্ত করছে নেপাল সরকার।

এয়ার কানাডা ছাড়াও কানাডার পোর্টার,  ওয়েস্টজেট কোম্পানির বহরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ চলাচল করছে। এয়ার কানাডার বহরে ৪৪টি, ওয়েস্টজেটে ৪৪টি এবং পোর্টারের বহরে বর্তমানে ২৯টি কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ রয়েছে।   

জনপ্রিয় হলেও যান্ত্রিক বা কারিগরি, বিশেষ করে ল্যান্ডিং গিয়ারের ক্ষেত্রে, ত্রুটির কারণে কিউ-৪০০ উড়োজাহাজের বিভিন্ন দেশে দুর্ঘটনায় পড়ার নজির রয়েছে। ২০০০ সালে চলাচল শুরুর পর থেকে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় পড়েছে এ উড়োজাহাজ। তবে ন্যাথালি দাবি করেছেন, বাণিজ্যিকভাবে আঞ্চলিক  যাত্রী পরিবহনের কাজে এ উড়োজাহাজ অত্যন্ত কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য।

পর পর দু’দিন বোম্বারডিয়ারের দুটি বিমান দু’ দেশে বিধ্বস্ত হয়ে অর্ধ শতাধিক জন মারা গেল। কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হওয়ার ঠিক একদিন আগে ১১ মার্চ ইরানের পাহাড়ি এলাকায় বোম্বারডিয়ার নির্মিত চ্যালেঞ্জার বিজনেস জেট ১১ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়।

তার আগে নিউ ইয়র্কের বাফেলো শহরের নিকটবর্তী স্থানে ২০০৯ সালে কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৫০ জন নিহত হন। কোলগান এয়ারের এ দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজটির সতর্ক ব্যবস্থায় যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটেছিল এবং এর ফলে বৈমানিক পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং এটাই দুর্ঘটনার কারণ ছিল বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল।

ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে ২০০৭ সালে জাপানে একটি কিউ-৪০০ বিমান জরুরি অবতরণ করে। এর এক সপ্তাহের মধ্যে জাপানে আরেকটি ছোট কিউ-৪০০ বিমান অবতরণ করার সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ দু’টি ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি।

একই বছর ডেনমার্কে একটি কিউ-৪০০ বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার অকার্যকর হয়ে পড়লে এটি জরুরি অবতরণ করে এবং এ ঘটনায় পাঁচজন আহত হন। এরপর দেশটির স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এয়ারলাইন্স ২০০৭ সাল থেকে কিউ-৪০০ বিমান ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। একই বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় আরেকটি কিউ-৪০০ বিমানের রাডার ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দিলে সেটি একটি স্থাপনায় আঘাত করে। 

বোম্বারডিয়ারের বৃহৎ কিউ-৪০০ প্রপ উড়োজাহাজের ৮৬ যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা রয়েছে।  এ উড়োজাহাজ বোম্বারডিয়ারের টরন্টো শহরের অদূরে ডন্সভিউ-এর কারখানায় নির্মাণ করা হয়ে থাকে। কারখানাটিতে প্রায় ৩,৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে।