ইউএস-বাংলার পাইলট ভালো ছিল, উড়োজাহাজও: বেবিচক চেয়ারম্যান

কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যে উড়োজাহাজাটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাতে কোনো সমস্যা ছিল না বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম নাইম হাসান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2018, 01:04 PM
Updated : 13 March 2018, 01:05 PM

তিনি বলছেন, বিধ্বস্ত বিমানটির ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানও বৈমানিক হিসেবে ভালো ছিলেন।

ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশে বিমান পরিবহন কার্যক্রম তদারককারী সংস্থার চেয়ারম্যান নাইম।

ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় সোমবার বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ।

এই দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজটির চার ক্রুসহ ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন, আহত হন ১০ জন। সর্বমোট নিহত হন ৪৯ জন।

বড় এই দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন বেবিচক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “এটা পুরো দেশের জন্য একটা মর্মাহত হবার মতো ঘটনা। তাই আমরা অবশ্যই এই ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করব, যেন আর কখনও এমন ঘটনা না ঘটে।”

ইউএস-বাংলার যাত্রীদের বিমা করা ছিল জানিয়ে নাইম বলেন, “সাধারণত দুই ধরনের বিমা থাকে। একটা প্যাসেঞ্জারের, অন্যটা প্লেনের নিজস্ব বিমা। ইউএস বাংলারও আছে। তারা যথেষ্ট অ্যাক্টিভ। তারা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।”

ইউএস-বাংলার ড্যাস উড়োজাহাজটি দেড় যুগ পুরনো হলেও তা কোনো সমস্যার কারণ নয় বলে মনে করেন নাইম।

তিনি বলেন, “বিমান সাধারণত কখনও পুরনো হয় না। বিমানের মেইন জিনিস হল ইঞ্জিন। ইঞ্জিনের একটা লাইফ আছে। ইঞ্জিন বদল করে আরেকটা লাগালে বিমান নতুন হয়ে যাবে। ৭৪৭ কত পুরনো এয়ারক্রাফট, কত ভালো চলছে।”

তবে দুর্ঘটনার শিকার ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটির ইঞ্জিনের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, উড়োজাহাজটি ঠিক ছিল বলেই তাদের ছাড়পত্র পেয়েছিল এটি।

“সিভিল এভিয়েশন থেকে এয়ারওয়ার্দি সার্টিফিকেট না পেলে কেউ ফ্লাই করতে পারবে না। এই এয়ারক্রাফটের ব্যাপারে বলতে পারি এটা সকালে দুটো সর্টিং করে এসেছে। অলরেডি এটা তো টেষ্টেড। সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম দুবার যাবার পর এটা ছিল তার তৃতীয় ফ্লাইট। উড়োজাহাজটি ভালো ছিল, এটা তো নিঃসন্দেহে প্রমাণিত।”

ইউএস-বাংলার পাইলটকে উড়োজাহাজ চালাতে বাধ্য করা হয়েছিল কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কোনো পাইলটকে অপারেশনে রাখা হবে কি না, সেটা নিজস্ব ব্যাপার। এখানে কী ঘটেছে, এটা নিশ্চিত না হয়ে বলা যাবে না।”

আবিদ সুলতান সম্পর্কে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “উনি খুব ভালো পাইলট ছিল। ভালো ক্রিকেট খেলতে পারত। আমার ছাত্র ছিল। অনেকেই বলেছে সে ড্যাশ-৮ এর ভালো পাইলট ছিল।”

ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান (ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি)

দূর্ঘটনার পর উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন ও নেপালের টাওয়ারের কর্মকর্তার মধ্যকার যে কথোপকথন ইউটিউবে প্রকাশ হয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “এটা বিশ্বাসযোগ্য কি না, সেটা বড় একটা প্রশ্ন। সাধারণত এই ধরনের কথাগুলো ট্যাপ করা থাকে। ওইটা না আসলে তো কিছু নিশ্চিত করে বলা যায় না। ইউটিউবে আপ লেস হতে পারে। সেটা আপাতত দূরে রাখি।”

ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষের দাবি, ত্রিভুবন বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাইলটকে ভুল সঙ্কেত দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করেননি পাইলট।

বেবিচক চেয়ারম্যান নাইম বলেন, “কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটল, সেটা নিয়ে বলার এখতিয়ার এখনও আমার নেই। নেপালের একজন প্রাক্তন সচিবের নেতত্বে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তারপরও আমরা তিন সদস্যের একটি দল সেখানে পাঠিয়েছি। ওই দলটিকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহায়তা করা হবে।”

নেপালের কর্মকর্তারা কিছু জানিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে নাইম বলেন, “ওই জায়গাটা খুব রেস্ট্রিকটেড। তারা সেখানে একটা যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনের দল দেশে আসলে সেখানকার পরিস্থিতি বলতে পারব।

“উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্সের তথ্য কোম্পানি ডিকোড করে এদেশে পাঠাবে। সেটা গোপন করার কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশে যারা ঘটনাটি তদন্তে জড়িত থাকবেন, তারা দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করবেন বলে আশা করা যায়।”