সরাসরি ভোটের জন্য নারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2018, 03:31 AM
Updated : 8 March 2018, 03:38 AM

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দেশে নারীরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনাদের অনেক প্রশ্ন আছে, অনেক দাবি-দাওয়া আছে। বাল্যবিয়ে আইনের বিষয়টি আছে।

“সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের দাবিও করেছেন আপনারা। আমি আপনাদের এতটুকু বলতে পারি, আপনারা ধৈর্য ধরুন, আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) আপনাদের হতাশ করবেন না।”

বর্তমানে সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে, যার সদস্যরা আইনসভায় আসেন পরোক্ষ ভোটে। দলগুলোর পাওয়া ভোটের ভিত্তিতে এই নারী আসন বণ্টন হয়।

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের বিধির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হয়ে যাবে বলে তা আরও ২৫ বছর বাড়াতে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর প্রস্তাব গত জানুয়ারিতে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

নারী নেত্রীরা বলে আসছেন, সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ বাড়ানো হলে তা নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে না। এর বদলে স্থানীয় সরকারের মত সংসদেও নারী আসনে সরাসরি ভোট চান তারা।

শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের শিক্ষার হার বাড়াতে হবে, তাহলে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে। আমরিকার মত উন্নত দেশে পুরুষের চেয়ে নারীরা কম বেতন পায়। সে দেশে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কোনো নারী আসেনি, কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী। আপনারা আমাদের নেত্রীর ওপর ভরসা রাখুন। তার নেতৃত্বে আমরা আরও এগিয়ে যাব।”

আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে ‘এখনি সময় এগিয়ে যাবার, নারীর জীবন বদলে দেবার’ স্লোগানে আঁধার ভাঙার শপথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠনের কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরাও কর্মসূচিতে ছিলেন।

বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে পুরুষরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল গানে গানে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানোর বার্তা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “প্রত্যয় নিতে হবে আজ, আমাদের সমাজে যেন নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না থাকে। আমরা নারী-পুরুষ না, মানুষ হতে হবে।”

দেশে নারীরা এগিয়ে গেলেও নিপীড়ন বন্ধ হয়নি মন্তব্য করে নারীদের মর্যাদা দিতে তিনি পুরুষদের প্রত্যয়ী হওয়ার তাগিদ দেন।

পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট ‘আমরাই পারি’র চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেন, “সমাজে নারীকে ঝড় মোকাবেলা করে এগোতে হয়। প্রতিদিন নারী ব্যক্তিগত জীবনে বিপদগ্রস্ত থাকেন। এখনই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাতের আঁধার ভেঙে, জীবন-মনের আঁধার ভেঙে নিজেদের জীবনে আলো নিয়ে আসব।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই সাবেক উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নির্যাতন মানব না, মর্যাদার হানি মানব না। সংবিধানে অধিকারের তারতম্য নেই, সেই অধিকার আমাদের দিতে হবে। যৌন হয়রানি, নির্যাতন থেকে বেরোতে হবে। রাষ্ট্র মুখে বললে হবে না, নারী অধিকার-সমতার কথা মুখে বললে হবে না। বাস্তবে দেখাতে হবে।”

সাংবাদিক রুনি, তনু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে, রাস্তায়- সবক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে নারীর নিরাপত্তা দিতে হবে রাষ্ট্রকে। কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকলেও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে।”

গত এক বছরে নারী নির্যাতনের সকল ঘটনার প্রতিবাদে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের পর রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রদীপ জ্বালানো হয়। এরপর উপস্থিত সকলে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এগিয়ে আসার শপথ নেন।