রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অধ্যাপক ইয়াসমিন হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “স্টেজেই পুলিশ ছিল, কিন্তু একটি উন্মুক্ত মঞ্চে যদি কেউ একজন হঠাৎ করে কিছু বের করে, শত শত স্টুডেন্টস সবাই ফুর্তি করছে... তখন কিন্তু কিছু করার থাকে না।”
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে শনিবার বিকালে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে এক তরুণ ছুরি নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায়। মাথা, পিঠ ও হাতে জখম নিয়ে তিনি এখন ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।
জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ জাফর ইকবাল বিভিন্ন সময়ে হুমকি পাওয়ায় ২০১৬ সালে তার পাহারায় পুলিশ দিয়েছিল সরকার। পুলিশি পাহারার মধ্যেই শনিবার তিনি আক্রান্ত হন।
হামলার পরপরই ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল নামের এক তরুণকে ধরে ফেলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। নিজেকে একটি মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে পরিচয়দানকারী ওই তরুণ র্যাবকে বলেছে, জাফর ইকবাল ‘ইসলামের শত্রু’। তাই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সে হামলা করে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন। পুলিশ সেখানে কার জন্য দায়িত্ব পালন করছিল- এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
রোববার ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসকরা অধ্যাপক জাফর ইকবালের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার শিকার অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হক রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
হামলার সময়ের পরিস্থিতির বর্ণনা করে ইয়াসমিন হক বলেন, “এটা কিন্তু একটা মুক্তমঞ্চ, অনেকজন দাঁড়াচ্ছে… আমার মনে হয়, ওর কাছে যদি আরও বড় অস্ত্র থাকত, আঘাত আরও সিরিয়াস হতে পারত।”
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন সদস্য হামলাকারীকে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন জানিয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ইয়াসমিন বলেন, “পুলিশ বেস্ট চেষ্টা করেছে, বাধা দিয়েছে।”
তিনি বলেন, পুলিশ গত দুই বছর ধরেই ‘অসম্ভব আন্তরিকতার সঙ্গে’ তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
“ইনফ্যাক্ট, অনেক সময় জাফর ইকবাল ওদেরকে বলে, ‘আপনারা চলে যান, আপনারা কেন আছেন।’ ও ফিল করে যে ওকে বেশি গার্ড করা হচ্ছে।”
হামলার শিকার হওয়ার কথা স্বামীর কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সাড়ে ৫টা পৌনে ৬টার দিকে আমাকে ফোন করেছে যে, ‘আমার উপর একটা হামলা হয়েছে। আমি সুস্থ আছি, এখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আমি চাই না, তোমরা টিভি দেখে খবর পাও, এজন্য আমি তোমাকে বলছি। ব্লিডিং হচ্ছে, আমি যদি পরে কথা বলতে না পারি… আমি ফাইন আছি।”
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইয়াসমিন হক বলেন, “তিনি এখানটায় নিয়ে আসার জন্য অ্যারেঞ্জ করেছেন। তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে কাজ করেছেন। আমি শুনেছি, তিনি নিজে ফোন করে শিক্ষকদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছেন।”
ইয়াসমিন হকের বাবাও আর্মি মেডিকেল কোরের একজন সিনিয়র ডাক্তার ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি সেজন্য এখানে কমফোর্ট ফিল করি। জাফর ইকবাল সুস্থ আছেন। তার কেয়ার নেওয়া হচ্ছে। দেশের বাইরে পাঠানো হবে কি-না একজন আমার কাছে জানতে চেয়েছে। আমার পুরোপুরি ভরসা আছে এখানকার চিকিৎসায়।”
অধ্যাপক ইয়াসমিন বলেন, তার স্বামী মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন এবং শিগগিরই সুস্থ হয়ে তিনি ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন।
হামলা-হুমকিতে দমে না যাওয়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, “আমাদেরকে গত দুই বছর না, বছরের পর বছর হুমকি দিচ্ছে, কাফনের কাপড় পাঠাচ্ছে, সব জিনিস বন্ধ করে আমরা কি জেলের ভেতরে থাকব? আমি মনে করি, আমরা আমাদের স্টুডেন্টসদের সঙ্গে ফ্রিলি ইন্টার্যাক্ট করব।”