এবার শীতের পর রাজধানীতে মশার উপদ্রব বাড়ার জন্য এসব জলাশয় ও ডোবা-নালাগুলোকেই দায়ী করছেন নগরবাসী।
ঢাকাবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা দুই সিটি করপোরেশন বলছে, রাউজক, গণপুর্ত অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন, রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জলাশয়গুলোর মালিক, কিছু আছে ব্যক্তিগত।
তাদের ভাষ্য, এসব জলাশয় পরিষ্কারের জন্য করপোরেশনের আলাদা বাজেট নেই, তাছাড়া এগুলো পরিষ্কারের দায়িত্বও তাদের নয়।
রাজধানীর কল্যাণপুর, মিরপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, ভাটারা, বাড্ডা, বনশ্রী, গোড়ান, খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদা, শনির আখড়া, দোলাইরপাড়, মোহাম্মদপুর, আদাবর এলাকার জলাশয়গুলোকে ‘মশার খামার’ বলছেন স্থানীয়রা। মশার প্রজনন চলছে উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি লেক এবং হাতিরঝিলেও।
বাউনিয়া খালের পাশের দেওয়ানপাড়ায় দেখা গেছে, খাল এবং খালের দুই পাশের নিচু জমিতে পানি জমে আছে। ডোবাগুলো কচুরিপানায় ভর্তি। কচুরিপানার ফাঁকে পানিতে ভাসছে মশা, লার্ভা।
ডোবানালা পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে জানিয়ে দেওয়ানপাড়ার বাসিন্দা আবদুস সোবহান বলেন, “এগুলো কোনোদিন পরিষ্কার করা হয় না। মশার ওষুধও ছিটানো হয় না।”
খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ারসাহারা এলাকার ডোবাগুলোও অপরিষ্কার। বদ্ধ পানিতে জন্মাচ্ছে মশা।
এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয় প্রায়ই, তবে মশার উৎপত্তিস্থলে হাত দেওয়া হয় না বলে জানান খিলক্ষেতের হাজীপাড়ার বাসিন্দা কুদরত আলী।
তিনি বলেন, “মাঝে মাঝে দেখি ধোঁয়া দিয়া যায়। কিন্তু এইসব ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে না। আমি কোনো সময় দেখি নাই।”
তিনি বলেন, “১০০ ফুট খালের খননের জন্য খালে বাঁধ দিয়ে মাটি তুলছে, তাই পানি প্রবাহ থমকে আছে। জমে থাকা পানিতে ডিম দিচ্ছে মশা। এ কারণে খালটি মশার একটা বড় প্রজননকেন্দ্র হয়ে গেছে।”
লোকবলের ঘাটতি থাকলেও এসব প্রজননকেন্দ্র ধ্বংসের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এই কাউন্সিলর।
কল্যাণপুর, পাইকপাড়া, বিশিল, মাজার রোড, গাবতলী এলাকার নিচু জমি এবং ঝিলের পানিতে জন্ম নেওয়া মশার কারণে দুর্ভোগে আছেন ওই এলাকার মানুষ। কেউ অভিযোগ না করলেও মশার উৎপাত আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানান ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান।
“আমি নিজেও অনুভব করি, একমাস আগের চেয়ে এখন এলাকায় অনেক বেশি মশা। অফিসে বাসায় সব জায়গায় মশা। এজন্য আমরা বিশেষ অভিযান করছি।”
এই ঝিল ‘মশার খামার’ বলে মন্তব্য করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. সুলতান মিয়া। ঝিল পরিষ্কার করলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান তিনি।
“মাঝে মাঝে করপোরেশনের অস্থায়ী কর্মীরা কিছু কিছু কচুরিপানা পরিষ্কার করে। আর আমাদের মশক নিধন কর্মীরা সকাল বেলায় লার্ভিসাইডিং করে। কিন্তু এটা সাফিসিয়েন্ট না।”
বুধবার কমলাপুর স্টেশন থেকে মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে ফুটপাত নর্দমার উন্নয়ন কাজ চলছে। নির্মাণাধীন নর্দমায় পানি জমে আছে। আর তাতে জন্মেছে মশা।
এই সড়কের ফুটপাতের দোকানদার শামছুল ইসলাম জানান, এসব মশা সারাদিনই কামড়ায়।
“দ্যাখেন, কী মশা হইছে ড্রেইনে। মশার কামড়ের চোটে এইখানে বইসা থাকন যায় না। এইখানে কেউ মশার ওষুধও ছিডায় না।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের চারপাশে যে ডোবানালা- এগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। আবার সরকারি মালিকানার যেগুলো সেগুলোও হয়তো প্রোপারলি পরিষ্কার করা হয় না। ওপেন ড্রেনগুলোতেও পানি জমে আছে। বদ্ধ পানিতে কিউলেক্স মশা বংশ বিস্তার করতে পারে সহজেই। পানি যদি ড্রেন হয়ে নদীতে চলে যেত তাহলে হয়ত এতো মশা হত না।”
জলাশয় পরিষ্কারের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকলেও মশক নিধনের জন্য মাঝেমধ্যে কিছু পরিষ্কার কাজ করা হয় বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল।
একই কথা বলেছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর আবদুর রাজ্জাকও।
তিনি বলেন, “গুলশান, বনানী এবং উত্তরার কয়েকটি লেকের মালিক রাজউক। গৃহায়ন ও গণপুর্ত অধিদপ্তর, রেলওয়েরও জলাশয় আছে। খালগুলোর মালিক ঢাকা ওয়াসা। বিমানবন্দর এলাকায় লেকগুলোর মালিক সিভিল এভিয়েশন। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব তো তাদের। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানই ইনডিপেনডেন্ট। তারা যদি এগুলো পরিষ্কার না করে তাহলে সিটি করপোরেশনের সেখানে কী করার থাকে?