একুশের অপেক্ষায় বইমেলা

হাতে ভালোবাসার পুষ্পগুচ্ছ, বসনে কালো রঙ; শোকার্ত বাঙালির কাফেলা চলেছে শহীদ মিনারে। ৬৬ বছর আগে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে বীর বাঙালি যে পথে রক্ত ঝরিয়েছিল, সে পথ ধরেই হেঁটে আসবে ফুলেল মিছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2018, 02:20 PM
Updated : 20 Feb 2018, 02:20 PM

শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষেই জনতার ঢল নামবে অমর একুশে বইমেলায়। বুধবার সকাল ৮টায় খুলে যাবে মেলার দুয়ার। খোলা থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

একুশের ভাষা আন্দোলন, মাতৃভাষার জন্য আত্মাহুতি দেওয়া বীর শহীদ আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের নানা প্রেক্ষাপট, বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ও রাজনীতির পালাবদলের নানা বইয়ের পসরা সাজিয়ে প্রস্তুত বইমেলা। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, “মেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে বৈঠক করেছি। মেলার কোথাও যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে নিরাপত্তা বাহিনী। মেলাকে নির্বিঘ্ন করতে আমাদের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।”

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একুশের দিনে মেলায় জনসমাগম হবে অনেক। এই দিকটি মাথায় রেখে আমরা সবদিক থেকেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এ দিনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। মেলায় নানা বিষয়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ বই এসেছে। দিনভর মুখর এক বইমেলার আশা করছি।”

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, “একুশের দিনে পাঠক গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি যেন মুক্তিযুদ্ধের বইগুলোর দিকে নজর রাখে, সেজন্য বইগুলো আমরা সেভাবে সাজিয়ে রাখব।”

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে  বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বাংলা একাডেমি।

সকাল সাড়ে ৭টায় একুশে বইমেলার মূল মঞ্চে রয়েছে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি কামাল চৌধুরী। 

একুশে বইমেলার শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মানুষের ঢল। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘অমর একুশে বক্তৃতা’। ‘একুশে ফেব্রুয়ারির লক্ষ্য কী, অর্জনের পথ কোন দিকে’ শীর্ষক বক্তৃতা দেবেন এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেবেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মঙ্গলবার মূল মঞ্চের আয়োজন

বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে ‘বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস : বহুত্ববাদ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের চার রাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয় ।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আকসাদুল আলম, আলোচনায় অংশ নেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও মাহবুবুল হক। সভাপতিত্ব করেন শামসুজ্জামান খান।

প্রাবন্ধিক বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানের চার রাষ্ট্রনীতি নানা সময়ে রাজনৈতিক দুর্বিপাকের শিকার হয়েছে কিন্তু নানান সংশোধনীর পর এখনও তার জনমুখী বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে। অন্যতম রাষ্ট্রনীতি সমাজতন্ত্রের অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তি যদি ধরা হয় উদার সাম্য-ভাবনা, তাহলে সে লক্ষ্য পূরণে কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দৃঢ়তা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈষম-বঞ্চনার সঙ্গেও আপসের প্রবণতা।”

শামসুজ্জামান খান বলেন, “সমাজে যুক্তিবাদের অনুপস্থিতি এবং ধর্মান্ধ-প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর অপতৎপরতার ফলে অসাম্প্রদায়িক-গণমুখী বাংলাদেশের রক্ষাকবচ হিসেবে স্বাধীনতার অব্যবহিত পর সংবিধানের চার মৌলনীতি সংযোজন ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ সে চারনীতির মর্মবাণীকে ধারণ করেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।”

‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’ পুরস্কার ঘোষণা 

বাংলা একাডেমি পরিচালিত ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার- ২০১৭’ ঘোষণা করা হয়েছে মঙ্গলবার।কানাডা-প্রবাসী কবি মাসুদ খান এবং যুক্তরাজ্য-প্রবাসী কবি মুজিব ইরম যৌথভাবে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি একাডেমি আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

নতুন বই

২০তম দিনে বইমেলায় নতুন বই এসেছে ১২৪টি।

রেয়ার বুকস এনেছে কবিতার বই প্রিয়শংকর বন্দোপাধ্যায়ের ‘আমি বাঙালি’,  দেশ পাবলিকেশন্স এনেছে শাহনাজ মুন্নির কবিতার বই ‘কল্প কথার গল্প’, ধ্রুপদী পাবলিকেশন্স এনেছে মাসুমা সুইটির কাব্যগ্রন্থ ‘নিঃশব্দ নিয়তি’, প্রতিভা প্রকাশ এনেছে  সেলিনা সুলতানার কাব্যগ্রন্থ ‘স্পন্দিত অনুভূতি’।

ক্ল্যাসিক উপন্যাসের মধ্যে রাশেদ মামুনের ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’ এনেছে ঝিনুক প্রকাশনী, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে এসেছে  সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের শিশুতোষ গল্পের  বই ‘গাছ খুন’, বাংলার প্রকাশন এনেছে উৎপল সরকারের উপন্যাস ‘যে মৃত্যুতে আক্ষেপ নেই’।

মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের মধ্যে আহমেদ পাবলিশিং হাউজ থেকে এসেছে বাশার খানের ‘ঢাকা ১৯৭১: ধামরাই গণহত্যা’।

অনুবাদের বইগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিভা প্রকাশ থেকে আসা রফিক হারিরির ‘জাদুর লাটিম’, ঐতিহ্য থেকে এসেছে সেনেকার ‘অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ’।

শান্তনু চৌধুরীর তিন বই

বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে শান্তনু চৌধুরীর তিনটি বই। এগুলোর মধ্যে ‘টেলিভিশন সাংবাদিকতা, সংবাদ ও সম্পাদনা’- বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন। উপন্যাস ‘রসিকা’ প্রকাশ করেছে পার্ল পাবলিকেশন্স।  মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘সূর্যোদয়ের আগে’ প্রকাশ করেছে বেহুলা বাংলা।