শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশে ইউনিসেফের ‘এভরি চাইল্ড অ্যালাইভ’ প্রচারাভিযান শুরু

বিশ্বজুড়ে নবজাতকদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে ইউনিসেফ।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2018, 11:45 AM
Updated : 22 Feb 2018, 08:36 AM

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থাটি বলছে, ‘এভরি চাইল্ড অ্যালাইভ’ শিরোনামের এই কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে নবজাতকদের সুরক্ষার দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি সমাধানের পথও দেখাবে। এছাড়া ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে শুরু হওয়া জাতীয় নবজাতক প্রচারণাকেও গতিশীল করবে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন ম্যানেজার এএম শাকিল ফয়জুল্লাহ এই কার্যক্রম সম্পর্কে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি বছরব্যাপী একটি প্রচারাভিযান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের মধ্যে দিয়ে আমরা আজ এটি শুরু করেছি।”

এর অংশ হিসেবে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ফেসবুক লাইভে অংশ নিয়ে নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। 

“একই সঙ্গে রাজনীতিক এবং সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যেও এই প্রচারণা শুরু করা হয়েছে।”

ইউনিসেফের হেলথ ম্যানেজার জিয়াউল মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ এমডিজি -৪ অর্জন করেছে এবং শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাসে অগ্রগতি সে তুলনায় কম। ১৯৯০ সালে দেশে ২ লাখ ৪১ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালে ওই সংখ্যা কমে ৬২ হাজারে নেমে এলেও বিশ্বের যে ১০টি দেশে সবচেয়ে বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয়, বাংলাদেশ এখনও সেই তালিকায় রয়ে গেছে।

“শূন্য থেকে ২৮ দিনের শিশুদের নবজাতক বলা হয়, কিন্তু ডেলেভারি হওয়ার আগের শিশুদের আমরা হিসাবেই ধরি না। ২৮ সপ্তাহের পর থেকে ডেলিভারি হওয়ার আগ পর‌্যন্ত যে শিশুগুলো মারা যাচ্ছে, এরকম প্রায় ৮৩ হাজার শিশু মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হয়। এগুলো যদি হিসাব করা হয়, তাহলে অনেকগুলো জীবন আমরা বাঁচাতে পারছি না।”

জিয়াউল মতিন জানান, বাংলাদেশে ৮৮ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু হয় মূলত তিনটি প্রতিরোধযোগ্য কারণে।

প্রশিক্ষিত ধাত্রী, পরিষ্কার পানি, জীবাণুনাশকের ব্যবহার; জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো এবং শিশুকে মায়ের সান্নিধ্যে রাখা ও ভালো পুষ্টি প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এসব মৃত্যু প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

২০৩৫ সালের সব ধরনের প্রতিরোধ্যযোগ্য কারণে শিশু ও নবজাতক মৃত্যু রোধের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল জাতীয় নবজাতক প্রচারণা।  

ইউনিসেফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, দাতা সংস্থা, বেসরকারি খাত, পরিবার ও ব্যবসায়ী খাতের প্রতি জরুরি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

“প্রতিটি মা এবং শিশুরই যে সাশ্রয়ী ও মানসম্পন্ন সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে সেই মূলতত্ত্বের পক্ষে জনমত গড়ে তোলাই এই প্রচারাভিযানের লক্ষ্য,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

এটি ইউনিসেফ ও সহযোগীদের স্থান; জনবল নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মা ও নবজাতকের যত্নে দক্ষতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও ধাত্রী তৈরি রাখা রাখা ও তাদের ব্যবস্থাপনা করা; প্রত্যেক মা ও শিশুর হাতের নাগালের মধ্যে পানি, সাবান, বিদ্যুৎ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণসহ পরিচ্ছন্ন ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা; এবং  কিশোরী, মা ও পরিবারগুলো যাতে মানসম্পন্ন যত্ন পাওয়ার দাবি জানাতে এবং পেতে পারে সে জন্য তাদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ ছাড়াও ইথিওপিয়া, গিনি-বিসাউ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালাউই, মালি, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তানজানিয়ায় এই প্রচারাভিযান চালানো হবে। বিশ্বব্যাপী যত নবজাতকের মৃত্যু হয় সম্মিলিতভাবে এই দেশগুলোতেই হয় তার অর্ধেকেরও বেশি।

এই প্রচারাভিযান প্রসঙ্গে ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার বলেন, “প্রতিরোধযোগ্য কারণে কোনো শিশুর মৃত্যু কাম্য নয় এবং প্রতিটি মা ও শিশুর কাছে আমাদের সাশ্রয়ী, মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা পোঁছে দেওয়া প্রয়োজন।

“ইউনিসেফের লক্ষ্য হচ্ছে এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে নীতিমালা পরিবর্তন ও অর্থায়ন সমস্যার সমাধানকে প্রভাবিত করতে জনসমর্থন সংগঠিত করা এবং এর জন্য ব্যক্তি, ব্যবসা খাত ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া।”

ইউনিসেফের কমিউনিকেশন ম্যানেজার শাকিল ফয়জুল্লাহ বলেন, এবছর আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে যাতে নবজাতকদের সুরক্ষার বিষয়টি যুক্ত করা হয়, সে ব্যাপারে তারা দাবি তুলবেন।