ভোটের বছরে ১৫০০ কোটি টাকার বেশি চায় ইসি

একাদশ সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য এবার জাতীয় বাজেটে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চায় নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2018, 07:31 PM
Updated : 18 Feb 2018, 07:31 PM

রোববার এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

এ বছরের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার আগেই রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে হবে দেশজুড়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।

সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ইসির জন্য ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তাতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ৫০০ কোটি টাকা ও উপজেলা পরিষদের জন্য সম পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল।

আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুতির প্রাক্কালে নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য বরাদ্দ নিয়ে দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এসময়  ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে ইসি সচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সিইসির এটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। এজন্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় ইসির প্রস্তাবনা নিয়ে কথা হয়েছে।

“এ সময় সংসদ, উপজেলা, সিটি নির্বাচন ও অন্যান্য উপ নির্বাচনসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়ে বাজেটের প্রস্তাবিত বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

তিনি বলেন, সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন, তাতে বিশাল অর্থের প্রয়োজন হয়। সে কারণে অর্থ দ্রুত ছাড়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আগে থেকে বলে রাখতে হয়। বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেটের কথাও তুলে ধরা হয়।

“সংসদ ও উপজেলার জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এর সঙ্গে আরও প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের বরাদ্দ রাখা হবে। এ বৈঠকে এনআইডি উইং-এর একটি প্রকেল্পর জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নিয়েও আমরা কথা বলেছি।”

এবার দেশে ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ৪১ লাখের মতো। এতে ৪০ হাজারের মতো ভোট কেন্দ্র থাকতে পারে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখের মতো লোক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারে।

এছাড়া ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার, নির্বাচনী সামগ্রী, পরিবহন, জ্বালানিসহ নির্বাচনী পরিচালনায় অন্তত ৬০-৭০টি খাত রয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় তার অনুপাতে প্রতিবারই নির্বাচনী ব্যয় বাড়ছে। ভোট গ্রহণে যতজন নির্বাচনী কর্মকর্তা লাগে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োগও দিতে হয় বেশ। এ কারণে পুরো নির্বাচন পরিচালনার ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় আইন শৃঙ্খলা খাতে।

দশম সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। আর র‌্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা ছিলেন টহলে।

ওই নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা।

দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় ভোটের সময় সশস্ত্র বাহিনীর অর্ধ লক্ষ সদস্যের সঙ্গে ছিলেন অন্তত  ৮০ হাজার পুলিশ, আট  হাজার র‌্যাব, ১৬ হাজার বিজিবি ও প্রায় সোয়া ২ লাখ আনসার সদস্য।

নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় হয় প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৮৩ কোটি টাকাই আইন শৃঙ্খলা খাতে যায়।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো ৩০০ আসনে ভোট করতে হলে খরচও সে অনুযায়ী দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

বর্তমান ইসির অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ এর ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাখাতে ব্যয় হয়েছিল ১৬৫ কোটি টাকার বেশি।