শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে: আদালতে প্রতিবেদন

শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচার কোন আইনে, কোন আদালতে হবে, তা স্পষ্ট করতে আইনটির সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রি পরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে অগ্রগতি প্রতিবেদনে জানিয়েছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2018, 07:19 PM
Updated : 18 Feb 2018, 07:19 PM

রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদনের এ তথ্য তুলে ধরেন আইনজীবী আশিকুর রহমান।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইইসুফ মাহবুব মোর্শেদ।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ হতে ভেটিংকৃত (নিরীক্ষিত) ‘শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।

“‘শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৩’ এর সংশোধনের বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট হাই কোর্ট বিভাগকে অবহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”

পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইইসুফ মাহবুব মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৩ সালে প্রণীত শিশু আইনের অস্পষ্টতা দূর করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা সমাজ কল্যাণ সচিবকে লিখিতভাবে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছিল।

“আজ সচিবের পক্ষে আইনজীবী আশিকুর রহমান আদালতকে জানিয়েছেন, খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে পাঠানো হয়েছে। আদালত তখন চলতি অধিবেশনেই যেন সংশোধনীটা পাশ হয় সে বিষয়ে তাগিদ দিয়ে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বিষয়টি মুলতবি রেখেছে।”

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ঢাকা, কক্সবাজার ও রংপুরে শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত পৃথক চারটি মামলার আসামিরা হাই কোর্টে জামিনের আবেদন জানান। এসব  মামলার সব আসামি প্রাপ্তবয়ষ্ক। শিশু আদালত এসব প্রাপ্তবয়ষ্ক আসামিদের জামিনের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করায় হাই কোর্ট রুল জারি করে।

একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী চারটি আদালতের বিচারকরা নিজ নিজ ব্যাখ্যা লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করেন।

ব্যাখ্যায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ এর বিধান অনুযায়ী যেসব মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ভিকটিম শিশু ওই সব মামলা বিচারের জন্য কিশোর আদালতে প্রেরণ করা হত।

আর যেসব মামলায় কেবল অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশু, ওই সব মামলার অপরাধ আমলে নেওয়ার পর মামলাটি বিচারের জন্য কিশোর আদালতে পাঠানো হত। কিন্তু ‘শিশু আইন, ২০১৩’ এর ১৭(১) ধারার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে।

কারণ ওই ধারায় বলা হয়েছে, “আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু বা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু কোনো মামলায় জড়িত থাকলে যে কোনো আইনের অধীনেই হোক না কেন, ওই মামলা বিচারের এখতিয়ার কেবল শিশু আদালতের থাকবে।

“তবে আইনের ধারা ১৮, দফা-(ক) এ শিশু আদালতকে ফৌজদারি কার্যবিধির দায়রা আদালতের ক্ষমতা দেওয়া হলেও ওই আইনে শিশু আদালতকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ এর কোনো ধারার অপরাধ আমলে নেওয়া কিংবা বিচারের সুনির্দিষ্ট এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। শিশু আইনের ৩৩ (১) ধারা অনুসারে শিশু আদালত অভিযুক্ত কোনো শিশুকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারবেন।”

গত বছরের ১২ নভেম্বর হাই কোর্ট শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচার কোন আইনে, কোন আদালতে হবে, তা স্পষ্ট করতে শিশু আইন-২০১৩ সংশোধনে সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়।

১৫ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয় জানায়, আইনটির সংশোধনের খসড়া সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পরে ১২ ফেব্রুয়ারি আদালত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অগ্রগতি জানাতে বলে রোববার আদেশের জন্য রেখেছিল।