৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ে সময় লাগে: আইনমন্ত্রী

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি প্রস্তুত করতে বিচারককে ‘যৌক্তিক সময়’ দিতে বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2018, 11:16 AM
Updated : 18 Feb 2018, 11:54 AM

তিনি রোবববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি একজন আইনজীবী হিসেবে এটুকু জানি-বুঝি ৬৩২ পাতা তৈরি করতে একু-আধটু সময় লাগে। আনরিজনেবল দেরি করাটা ঠিক না। রিজনেবল টাইম যদি নেয়, তাকে সেই সময় দিতে হবে।”

তার আগে সিরডাপ মিলনায়তন এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের একই প্রশ্নে তিনি বলেন, “একটা রায়ের কপি পেতে হলে রায়টা কত বড় সেটার উপর নির্ভর করে কত তাড়াতাড়ি রায়ের কপি দেওয়া হবে।

“একটা ক্ষেত্রেই শুধু এই আইন ও এই পদ্ধতির ব্যতয় ঘটে, সেটা হচ্ছে কোনো আসামিকে যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাহলে বলাই আছে, তিনিই একমাত্র দাবিদার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রায়ের কপি পাওয়ার। আর আসামিকে অন্যান্য সাজা দেওয়া হলে তখন একটা যুক্তিসঙ্গত সময়ে রায়ের সার্টিফাইড কপি দেওয়া হয় তাকে।”

গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর এখনও রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ায় আপিল করতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। আপিল করে জামিন নিয়ে তিনি বেরিয়ে আসবেন বলে আশায় আছেন তার দলের নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, খালেদা জিয়াকে বেশি দিন কারাগারে আটকে রাখতেই রায়ের অনুলিপি দেওয়া হচ্ছে না।

আইনমন্ত্রী সচিবালয়ে বলেন, “উনারা (বিএনপি নেতারা) কী বললেন, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। আমরা আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটাই নাই।”

রোববার বিএনপির আইনজীবীরা আবেদন নিয়ে বিচারকের কাছে গেলে সোমবার তাদের অনুলিপি সরবরাহের আশ্বাস দেওয়া হয়।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলছেন, বিএনপি বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে রায়ের পরপরই অনুলিপির জন্য আবেদন করেনি।

বিএনপি আমলের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আনিসুল হক বলেন, “মওদুদ আহমেদ সাহেব আইনমন্ত্রী থাকাকালীন আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার পাইনি। মওদুদ আহমেদ সাহেব সরকারে থাকাকালীন ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স বাতিল করার কোনো পদক্ষেপ পাই নাই।

“এগুলো আজকে উনারা যখন বলেন, মওদুদ আহমদ সাহেব ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যখন এরশাদ সাহেবের পার্টিতে ছিলেন তখন কিন্তু খালেদা জিয়াকে ঠিক এইভাবে...এইসব কারণেই উনাকে ইয়ে করেছিলেন।”

সিরডাপের অনুষ্ঠানে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই যে, সরকারের এখানে (রায়ের অনুলিপি না পাওয়া) কোনো হাত নেই। উনি আপিল করবেন সেটাই আমরা চাই।”

খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের ‘ভুলের কারণে’ তিনি শুরুতে কারাগারে ‘ডিভিশন’ পাননি বলে দাবি করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তারেক রহমানের বিষয়ে তিনি বলেন, “পলাতক আসামি এটা ওদের কালচার। নির্লজ্জ... একজন পলাতক আসামি তারেক রহমান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি যিনি, তাকে দলের দায়িত্ব দিলেন।

“তিনি এসে হাই কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারতেন না? ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি এসে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারতেন না? তার সেই সাহস নেই। জানেন তিনি সেই অপরাধে অপরাধী। তাই তিনি কোর্টের বাউন্ডারি তো দূরের কথা, বাংলাদেশের বাউন্ডারি পর্যন্ত তিনি আসতে চান না।”

খালেদার মামলার অর্থের পরিমাণ নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ১৯৯৩ সালে দুই কোটির টাকার দুর্নীতি বর্তমানে ৩০০ কোটি টাকার সমান।

“১৯৯৩ সালে দুই কোটি টাকায় অনেক কিছু হত, গুলশানে এক বিঘা জমি পাওয়া যেত। এখন ২০০ কোটি টাকা।”

সচিবালয়ে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পোর সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের সামনে আনেন আইনমন্ত্রী। ইউএনডিপি কর্মকর্তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা বলেন। 

আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিকে বলেছি, যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি ধারা নিয়ে কথা বলছেন সেটা কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কিছু করার জন্য নয়।

“৩২ ধারা নিয়ে সমস্যা হলে সেটা আমি দেখব বলে আমি আগেও বলেছি। অপব্যবহারের সুযোগ আমরা কমিয়ে এনেছি, প্রয়োজনে যদি অপব্যবহারের সুযোগ আরও যদি কমানোর দরকার হয় আমরা সেটাও করব।”