মুহিত-নাহিদের কড়া সমালোচনায় বি চৌধুরী

প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষা খাত এবং একের পর এক কেলেঙ্কারিতে ব্যাংক খাত ‘ধ্বংসের’ অভিযোগ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2018, 02:43 PM
Updated : 16 Feb 2018, 02:56 PM

শুক্রবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় ‘দায়িত্বে ব্যর্থতার জন্য’ এই দুইজনকে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বি চৌধুরী বলেন, “একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসের নায়ক কারা, মন্ত্রী সাহেব কিছুই জানেন না। কিন্তু আপনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যে দায়িত্ব আপনি পালন করেন নাই। আপনার কি সেই আসনে থাকার অধিকার আছে?

“আপনি পদত্যাগ করবেন না, ঠিক আছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দায়িত্ব ছিল, দেশের ছেলে-মেয়েদের ধ্বংস হচ্ছে এই অযোগ্য লোককে মন্ত্রী বানিয়ে। লোকটা ভালো, শিক্ষিত; কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় চালানোর যোগ্যতা তার নাই।”

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (ফাইল ছবি)

‘ভালো লোক’ হওয়ায় তার পদত্যাগ চান না জানিয়ে বদরুদ্দোজা বলেন, “শিশু মন্ত্রণালয় আছে, ধর্ম মন্ত্রণালয় আছে- ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা মন্ত্রণালয় আছে না, সেই ঠাণ্ডা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন।”

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাবও করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এক্ষেত্রে প্রথমত এমসিকিউ বাতিল করার পরামর্শ তার।

বি চৌধুরী বলেন, “১০০ নম্বরের মধ্যে ৩৩ শতাংশ পাস করার মতো প্রশ্ন থাকবে, যাতে দুঃখ না থাকে যে ফেল করার মতো কঠিন প্রশ্ন আসছে। ৩৩ ভাগ দেন, যারা একটু ভালো পড়াশোনা করছে তাদের জন্য। আর ৩৩ শতাংশ দেন মেধা যাচাইয়ের জন্য, কঠিন প্রশ্ন।”

শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার মন্তব্য করে চিকিৎসক বদরুদ্দোজা বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন পঁচে গেছে, এটার সার্জারি করা দরকার।”

অর্থমন্ত্রী মুহিত দেশের অর্থনীতিকে ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছেন অভিযোগ করে বি চৌধুরী বলেন, “উনি মনে করেন, ব্যাংকের দায়িত্ব ব্যাংকারদের, চুরি করলে চোরের দায়িত্ব। আপনি ফাইন্যান্স মিনিস্টার, একদিন যদি আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়... অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে যায়।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (ফাইল ছবি)

অর্থমন্ত্রীর স্টুপিড ও রাবিশের মতো ভাষা ব্যবহারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এক সময় ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলেন। যে কোনো কারণে হোক তিনি প্রশাসন চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন। একটা ব্যাংকও ঠিকমতো চলে না, দেখতে পারেন নাই, ধরতে পারেন নাই, শাস্তি দিতে পারেন নাই, কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন নাই।

“এরপরও যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ক্ষমা করে দেন... ক্ষমা করা উত্তম কিন্তু উত্তমের পন্থা ছেড়ে দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমাদের অর্থনীতি যেন একেবারে ধ্বংস না হয়ে যায়।”

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিকল্পধারা সভাপতি বলেন, “জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন করার পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে, এমন নির্বাচন দিতে হবে, সুষ্ঠু ভোট হতে হবে, ভোট গুণতে হবে। এছাড়া ভবিষ্যৎ ভয়াবহ অন্ধকার।”

তিনি বলেন, “পাঁচ শতাংশ লোক গোড়া আওয়ামী লীগ, পাঁচ শতাংশ গোড়া বিএনপি আর পাঁচ শতাংশ গোড়া জামায়াত। এর বাইরে বাকি ৮৫ শতাংশ লোক সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুন্দর নির্বাচনের আবহ চায়। এর মাধ্যমে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। সেই সুযোগ করে দিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।”

দুর্নীতি মামলায় খালেদার সাজা হওয়ার মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ‘চূড়ান্ত অনিশ্চিত’ অবস্থার দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, “৮ তারিখে বেগম জিয়ার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং তারও আগে তার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সেই রকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি আমাদের সামনে দেখতে সুযোগ দেয় না আর।

“আজকে কোনো একজন নেতা বলেছেন, বেগম জিয়ার রায় ও তাকে জেলখানায় যে আচরণ করা হয়েছে তার মাধ্যমে সমঝোতার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।”

মান্না বলেন, “আপিল করার জন্য রায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া উচিত, কারণ লোয়ার কোর্ট কোনো রায় দিতেই পারে না, পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা ছাড়া। কিন্তু লোয়ার কোর্টেও এটা হল। আমি বিশ্বাস করতে চাই না, লোয়ার কোর্ট সাত দিনেও রায় দেয়নি। আমি সেজন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি পরিপূর্ণ সহমর্মিতা জানাচ্ছি।

“লোয়ার কোর্ট এরকম করতে পারে, তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম জিয়া, উনি দেখেননি? জানেন নি? উনি কিছুই করেননি, সেজন্য নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই আটকা পড়েছেন।”

সোনার বাংলা পার্টি আয়োজিত ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি শেখ আব্দুন নূর, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হারুন-অর-রশীদ বক্তব্য দেন।