ভালোবাসার মানুষের পছন্দের বইয়ের খোঁজে

ফাগুনের যে রঙ লেগেছিল একুশের বইমেলায়, ভালোবাসার দিনে তা ছড়িয়েছে আরো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2018, 04:00 PM
Updated : 14 Feb 2018, 05:25 PM

বুধবার ভ্যালেন্টাইন্স ডে; ভালোবাসার দিনে প্রিয়জনের সঙ্গে দিনভর শহর ঘুরে বেড়ানো মানুষের পদভারে পড়ন্ত বিকালে বইমেলা মুখর হয়ে ওঠে। ভালোবাসার মানুষের পছন্দের বই কিনে, লেখকের অটোগ্রাফ নিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফেরেন সবাই।

বসন্ত উৎসবের আমেজ না ফুরাতেই এসেছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে; ফলে উৎসবের রেশ রয়ে গেল এদিনও। বুধবার বিকালে বইমেলায় আসা ছেলে বুড়ো, তরুণ-তরুণী আর দম্পতি সবার বসনে ছিল বসন্তের ছোঁয়া। খুদে পাঠকদের দল বাসন্তী সাজে এসেছে শিশু চত্বরে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসেইন মুহম্মদ আকবর জানালেন, প্রিয় বইয়ের খোঁজে মেলায় বুধবারই প্রথম এসেছেন তিনি। শিবরাত্রি উপলক্ষে ছিল ঐচ্ছিক ছুটি থাকায় মেলায় এসেছেন সপরিবারে।

তিনি বলেন, “স্ত্রী ও সন্তানের বড় বায়না ছিল, মেলায় আসবে । আমিও ছুটি পাচ্ছিলাম না। আজ ছুটি পেয়ে গেলাম। মেলায় আমি আজ প্রিয় লেখকদের বই খুঁজব। তবে সবার আগে খুঁজব, আমার দেশের তরুণ লেখকদের বই। নিজের দেশের লেখকদের লেখা আমার ছেলেমেয়েদের আগে পড়াব। পড়ে না কলকাতার সাহিত্যিক, কবিরা আসবেন।”

গাজীপুর থেকে আসা পাঠক ছোঁয়া বলেন, “ভালোবাসার দিনটিতে প্রিয় মানুষকে তার প্রিয় বইটি উপহার দেব। তিনি অফিসের ব্যস্ততায় আজকে আসতে পারেননি। তার জন্য তার প্রিয় লেখকের বই কিনে নিয়ে যাচ্ছি।”

ব্যস্ত নগর জীবনে উৎসব পেলেই সেজেগুজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হওয়া অনেকের এদিন শেষ ঠিকানা হয় বইমেলা।আর তাতেই ব্যতিক্রমী চেহারা নেয় মেলা।

সাজ্জাদ-মিলি দম্পতির সাত বছরের প্রেম সম্প্রতি পেয়েছে পরিণতি। বিয়ের পর মঙ্গলবারই এলেন বইমেলায়। সাজ্জাদের পছন্দ থ্রিলার, অনুবাদের বই। অন্যদিকে মিলির ভালো লাগা হুমায়ূন সাহিত্য।

মেলায় কাকলী প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের সামনে এসে মিলির বায়না, আজ সব প্রিয় কিনে দিতে হবে।

মিলির ভালো লাগে হুমায়ূন আহমেদের কথাসাহিত্য, সাজ্জাদ তাই হুমায়ূনের শ্রেষ্ঠ রচনা কিনে দিলেন তাকে।

সাজ্জাদ বলেন, “প্রেমে পড়ার পর বইমেলা মিস হয়নি কখনও। এবার একটু দেরি হয়ে গেল। আজ ভালোবাসা দিবস। ভাগ্যিস ছুটির দিনে পড়েনি বইমেলা। মওকা বুঝে তাই চলে এলাম।”

পাঠক আরিফুল ইসলাম  অভি বলেন, “মেলায় উদ্দীপনামূলক বই কি কি এসেছে, তার খোঁজে এসেছি। আমি আজ বই কিনব আমার মায়ের জন্য। মা বই পড়তে ভালোবাসেন। ভালোবাসা দিবসে তাই মায়ের জন্য বই কিনে নিয়ে যাচ্ছি।”

তরুণ পাঠক তারিক জানান, তিনি বই কিনেছেন তার দাদার জন্য। অশীতিপর দাদা মেলায় আসতে পারছেন না বলে তার তালিকা করে দেওয়া বইগুলো তিনি খুঁজে বেড়ালেন।

বিপিএল থেকে আসা অনুবাদের বই ‘সবচেয়ে ভয়ংকর শিকার’ কিনে নিতে নিতে পাঠক আশিকুর রহমান জানান, তিনি বইটি তার স্ত্রীর জন্য কিনে নিয়েছেন।

এক প্রেমিকযুগল খুঁজলেন রোমান্টিক কবিতার বই।

বইমেলায় এবারই প্রথম এসেছে তরুণ লেখক বীথি সপ্তর্ষীর বই ‘এক্স ক্রোমোজোম’। মেলায় পাঠকের অনুভূতি জানতে সন্ধ্যায় এসেছিলেন শব্দশৈলীর স্টলে।

পরে তিনি জানান, “পাঠকের পাঠ প্রতিক্রিয়া জানতে আজ মেলায় এসেছি। তারা তরুণ লেখকদের কিভাবে দেখেন, সেটা জানতেই আজ মেলায় এসেছি।

“পাঠক তার নিজের মনের কথা গল্প, কবিতায় খুঁজে ফেরেন। যখন তার সেই অব্যক্ত কথাগুলো বইয়ে মিলে যায়, সেই  বইটি কিনে নিয়ে যান প্রিয় মানুষটির জন্য। ভালোবাসা দিবসে এই দৃশ্য বড় সুন্দর।”

সন্ধ্যায় মেলায় আসেন অধ্যাপক-গবেষক মুনতাসীর মামুন।

তিনি বলেন, “মেলায় আজই প্রথম এলাম। ভালোবাসা দিবসে তারুণ্যের এমন জোয়ার আমাদের আশাবাদী করে তুলছে। বইয়ের পাঠক কমছে, এ ধারণা ভুল প্রমাণ করে তারা বই কিনে নিচ্ছেন। বড় ভালো লাগল।”

কবি তারিক সুজাত বলেন, “ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া মেলায় লাগবে, এটা অবধারিত। দেশ-কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভালোবাসা দিবস এখন এ দেশে উদযাপিত হচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পাঠকের কাছে বইয়ের আবেদন কমছে, তা কিন্তু মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।তরুণের কাছে ছাপার বইয়ের আবেদন যে চিরন্তন। তাদের উচ্ছ্বাসে মেলায় যেন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।”

কবি আসাদ মান্নান বলেন, “আজ ফাগুনে যেন আগুন লেগেছে মেলায়! মেলায় এত প্রাণের জোয়ার, একে তো উৎসবই বলা চলে। সত্যি অভিভূত হই। তারা যে কেবল ঘুরে বেড়াচ্ছে তা নয়, তারা কিন্তু আজ বইও কিনে নিয়ে যাচ্ছে।”