পরনে হলুদ শাড়ি, তার সঙ্গে মিল রেখে হাত-কান ও গলায় গয়না, খোঁপায় বাহারি ফুল, মাথায় ফুলের মালা-উচ্ছ্বল তরুণীর এই সাজ মঙ্গলবার রং ছড়িয়েছে মেলায়।অনেকে ছিলেন জোড়ায়, একে অপরের হাত ধরে তারা ঘুরে বেড়ান বইমেলা প্রাঙ্গণজুড়ে। এরইমধ্যে পছন্দের বই কিনে নেন তারা।
বেলা ৩টায় মেলার দুয়ার খোলার আগেই টিএসসি ও দোয়েল চত্বর মোড় থেকে জনস্রোত চলছিল গ্রন্থমেলা চত্বরে। সারি ধরতে হল এদিন, তবে তাতে ভাটা পড়েনি উৎসাহে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিন্দিতা সোমারা এসেছিলেন দলবেঁধে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণের রচনা সমগ্র কিনতে কিনতে অনিন্দিতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্লাসের ফাঁকে মেলায় আসার ফুরসত পাই না। তারপর সেমিনার, অ্যাসাইনমেন্ট তো আছেই। আজ যা একটু বের হতে পেরেছি। আজ বন্ধুরা দলবেঁধে চলে এলাম।”
শুভ্র, অনিক ও বাঁধন এসেছেন গাজীপুর থেকে। নগরে বসন্ত উৎসবগুলোতে ঢুঁ মেরে সব শেষে তারা এলেন বইমেলায়। নতুন আসা বইগুলোর দিকেই তাদের ঝোঁক।তরুণদের দলটি খুঁজছিলেন তরুণদের কথাসাহিত্য, কবিতা ও অনুবাদ।
বিপিএল থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালে একুশে পদকজয়ী ভাষাসংগ্রামী মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘পলাতক জীবনের বাঁকে বাঁকে’।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ‘সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ কিনে নিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধন বলেন, “আমরা তিন বন্ধুই বেশ পড়ুয়া। ক্লাসের ফাঁকে সময় পেলে আমরা বৃথা সময় নষ্ট না করে বই পড়ি। গাজীপুরে নিজেরা একটা সাহিত্য সংসদও করেছি। নতুন লেখক কাদের বই এলো, এবার সেসব বই কিনব। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বাঙালির জ্ঞানমনীষা। তার বইটি পড়ে আমরা নতুন কিছু জানব।”
এদিন বইমেলায় বেচা-বিক্রিওতে সন্তুষ্ট প্রকাশকরা। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, “বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবসে বরাবরেই মতো পাঠকের ঢল নেমেছে। আজ শুধু তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন না, ঘরে ফিরতে বইও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।প্রিয় মানুষকে বই উপহার দেওয়ার চল কিন্তু এখনও উঠে যায়নি। অনেক পাঠক সঙ্গে আসা প্রিয় মানুষটিকে বই কিনে দিচ্ছেন। কেউ হয়ত বই পড়েন না, তাকে পড়ুয়া বানাতে বন্ধুরা চলে আসছেন বই চেনাতে। বইমেলার এই দিনটি সত্যি অন্যরকম।”
মেলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে দেখা যায় মাঝে মধ্যেই, পহেলা ফাল্গুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও ছিলেন বইমেলা প্রাঙ্গণে।
সংস্কৃতিমন্ত্রী তখন বলেন, “এভাবে সেলফির আবদার মেটাতে গেলে আমি বই কিনব কখন?”
সংস্কৃতিমন্ত্রীর ভক্তদের ভিড় ঠেলে অন্যপ্রকাশ স্টলে ঢুকে পড়লেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
“হাজারো মানুষ উৎসবের মধ্যে দিয়ে পহেলা ফাল্গুন উদযাপন করছে, বই ভালোবেসে তারা আজ দল বেঁধে মেলায় এসেছেন- এতেই তো প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “মেলায় কতটা মানসম্মত বই এসেছে, সেটা তো দর্শক রায় দেবে। তবে আমরা ধারণা করতে পারি, বাংলা সাহিত্যের ধারা ক্রমাগত এগিয়ে চলছে। সাহিত্যে মেধার চর্চা বাড়ছে, বাড়ছে সৃষ্টিশীলতা।”
মূল মঞ্চের আয়োজন
গ্রন্থমেলার ১৩তম দিনে মঙ্গলবার বিকালে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘নারীর নিরাপদ পরিসর ও পরিবেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুশি কবির। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুলতানা কামাল, হোসনে আরা শাহেদ, সুভাষ সিংহ রায় ও নূরুন্নাহার মুক্তা, সভাপতিত্ব করেন আয়শা খানম।
সভাপতির বক্তব্যে আয়শা খানম বলেন, “নারীর জন্য পরিসর তৈরির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যেখানে নারীরা নানাভাবে অবদান রেখে গেছেন। নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির সংগ্রামে নারীর পাশাপাশি পুরুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে রাষ্ট্র, পরিবার ও সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে পুরুষের সাথে সমতার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।”