রায়ের পর স্বস্তি, ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগও

খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হলে কী হবে, সেই শঙ্কায় দিন শুরু হলেও নাশকতামূলক তেমন কোনো ঘটনা না ঘটনায় স্বস্তির কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

মঈনুল হক চৌধুরী ফয়সাল আতিক ও সালাহউদ্দিন ওয়াহেদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2018, 02:50 PM
Updated : 8 Feb 2018, 06:44 PM

বৃহস্পতিবার দিনভর ঢাকার রাস্তায় গাড়ি স্বল্পতায় অনেককে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি ও নিরাপত্তা কড়াকড়িতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককে।

অনেক জেলা থেকে ঢাকার বাস বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে রাজধানীতে জরুরি প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের।

রায়কে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাজধানীজুড়ে ছিল র‌যাব্-পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা

এরপরও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় অনেকে স্বস্তির কথা বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, কখন কী হয় সে শঙ্কা এখনও রয়েছে।

উত্তর বাড্ডার চাল ব্যবসায়ী বিপ্লব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ভেবেছিলেন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার ‘সাহস সরকার দেখাবে না’।

“এমন রায় দিলেও অনেক সংঘর্ষ হবে। কিন্তু সরকার তো রায় দিয়ে দিল। চারিদিকে পরিবেশ পরিস্থিতিও শান্ত। শুধু গুলশান ও পুরান ঢাকার দিকে কিছু মারামারি হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক দিদার ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সকাল থেকেই চাপা আতঙ্ক কাজ করেছিল। তবে বড় ধরনের খারাপ খবর ছাড়াই দিনটি কেটেছে।”

আদালতমুখী খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কাকরাইল চার্চ অতিক্রম করার আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে

পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বেশ তৎপর ছিল। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও কিছুটা সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে।”

উৎকণ্ঠা নিয়ে সকালে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রের দিকে ছুটলেও এদিন স্কুলে যায়নি ঢাকার অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

প্রাইভেট পড়তে মিরপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাওয়ার কথা থাকলেও তা বাদ দেন মিরপুর বাংলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র নাফিস।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমিও অনেক শঙ্কার মধ্যে ছিলাম। তবে দিন শেষে বড় ধরনের কোনো সংঘাত ছাড়াই দিনটি পার করতে পেরেছি।”

যশোর মণিরামপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক আলমগীর কবির ২২ দিনের একটি প্রশিক্ষণে ঢাকায় এসেছেন, উঠেছেন নায়েম ভবনে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক কিছু কাজ ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে যা দেখছি, আজ বাইরে বের হওয়ার সাহস হয়নি। তার ওপর আরেকটা বিষয় হলো বাসার মানুষদের টেনশন। আমার স্ত্রী গতকাল থেকে দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়েছিল।”

বিএনপি নেতাকর্মীদের ঠেকাতে রাজপথে ছিল আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান থাকেন মিরপুর ১ নম্বরে, তার অফিস পুরান ঢাকার নয়াবাজারে।

তিনি বলেন, “আজ সকাল থেকেই টেনশন ছিল রাস্তায় কী ঘটে না ঘটে। আমি অফিসের গাড়িতে গিয়েছি। নিরাপদেই ছিলাম। তবে অফিসে যাওয়ার পথে সাধরণ মানুষের দুর্ভোগ চোখে পড়েছে। আজকে বাসের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। কল্যাণপুর, শ্যামলীসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর মানুষকে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।”

জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা মহিউদ্দীন মিরাজ বলছেন ভিন্ন কথা। রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় নিত্যদিনের যানজটের ভোগান্তি না পোহাতে হওয়ায় খুশি তিনি।

বাস স্বল্পতায় হেঁটেই গন্তব্যে যান অনেকে

মিরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে “খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার দিনটিতে বেশ স্বস্তির সঙ্গেই পার করেছি। সকালে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় মিরপুরের বাসা থেকে বেশ স্বস্তিতেই অফিসে গেছি। বিকালেও সহজে বাসায় আসতে পেরেছি।”

তার মতোই বললেন এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক নূর মোহাম্মদ: “সকালে ছেলে ভালোভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে গেছে, ভালো পরীক্ষাও দিয়েছে। বুধবার আতঙ্ক ছিল মনে, আজ তো কোনো ঝামেলাই হল না। আশা করি, আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারব। তবে রাস্তাঘাটে পরিবহন কম থাকায় আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।”

দূরপাল্লায় বাস বন্ধ থাকায় সমস্য্যায় পড়ার কথা জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের নুরুল আলম টিপু। প্রথমবার সৌদি আরব যাচ্ছেন তিনি, শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে ফ্লাইট।

বৃহস্পতিবার দিনভর ঢাকার রাস্তা ছিল ফাঁকা

টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে ঢাকা যাওয়ার কোনো গাড়ি নেই। মানুষের মনে শঙ্কা, সন্ধ্যা বা রাতে কী জানি কী ঘটে। গাড়ি নেই রাস্তায়, কী করে ঢাকা যাব ভেবে পাচ্ছি না। বিমান ধরতে যে কোনো উপায়ে রাতের ট্রেনে চড়ব।”

রাজনৈতিক উত্তাপ ছায়া ফেলেছে একুশে বইমেলায়ও। অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা বলা যাচ্ছে না। মেলায় বই বিক্রি ও পাঠক সমাগম কেমন হবে, তাও অনিশ্চিৎ।”

দুপুরে মগবাজার থেকে মহাখালীর পথে লেগুনায় বসে মধ্যবয়সী এক যাত্রী বলছিলেন, “অনেক দিন ভালোই কেটেছে। এখন যে কী হবে?”