‘জিয়া পরিবার আর দাঁড়াতে পারবে না’

বিদেশ থেকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে আসা অর্থ আত্মসাতের মামলায় বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর সাজার রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছেন কয়েকজন সংসদ সদস্য।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2018, 02:33 PM
Updated : 8 Feb 2018, 02:46 PM

তাদের মধ্যে একজন সাংসদ বলেছেন, এই রায়ের মধ্যে দিয়ে জিয়া পরিবারের ইতি টানা হয়ে গেছে, এই পরিবার আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার দুর্নীতির এই মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত।

এছাড়া খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের হয়েছে দশ বছর করে কারাদণ্ড।

সেই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনার আগে এই রায় নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংসদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

তিনি বলেন, “এই মামলা ১০ বছর চলেছে। যাতে না চলে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আদালতে বার বার সময় নেওয়া হয়েছে। তিন জন বিচারক পাল্টানো হয়েছে। শেষের দিকে পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে। নানারকম নাশকতা চালানো হয়েছে। আজকে যখন রায় হবে বিচারক আগেই তারিখ নির্ধারণ করেছেন। বিচারক ১০টায় এসে বসে আছেন আর খালেদা জিয়া গেলেন ১১টার পর। তিনি বিচারকের প্রতি সম্মান দেখাননি।”

খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়ার পথে মগবাজারে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, “তারা (বিএনপি) সিনক্রিয়েট করল, যাতে আদালতে যাওয়া না লাগে তার জন্য নাটক সৃষ্টি করল। তবে পুলিশ ধৈর্য সহকারে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।

“বিএনপি আইন মানে না, বিচার মানে না, সংবিধান মানে। আদালত তাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে। বিচারপতি তাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে। এরপরও তারা আদালতে হট্টগোল করেছে। মামলা বানচাল করার জন্য লন্ডনে হাই কমিশনারের ওপর আক্রমণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি তারা ভাংচুর করছে। প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করেছে। সন্ত্রাসী জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে রায় যাতে না হয় সেই চেষ্টা করেছে। বিএনপি সন্ত্রাসীদের দল, জঙ্গিদের দল। জামায়াত-বিএনপি মিলে সন্ত্রাসী, জঙ্গি অপরাধের আশ্রয় কেন্দ্র হয়েছে।”

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “মিথ্যাচার বাদ দিন। অপরাধজনিত কারণে বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের প্রত্যাখ্যান করবে। জিয়াউর রহমানের সামরিক গণতন্ত্র আর বাংলাদেশে আসবে না।”

তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এটা ঐতিহাসিক দিন। আজকে আদালতে যে রায় হয়েছে তা ঐতিহাসিক। একজন প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি করলেও যে বাঁচতে পারেন না তার প্রমাণ হয়েছে। দেশে আইনের শাসন চলছে তার প্রমাণ হয়েছে। এই রায়ে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। খালেদা জিয়া তার কর্মফল ভোগ করলেন।

“এই রায়ে প্রমাণ হলো জিয়া পরিবারের এখানে ইতি টানা হল। জিয়া পরিবার আর দাঁড়াতে পারবে না। নির্বাচন করতে পারবে না। আইনের ঊর্ধ্বে যে কেউ নন, এই রায়ে সকলের উদ্দেশ্যে তার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। পাপে বাপকেও ছাড়েনা- এটা যেন সকলেই মনে রাখেন।”

জাসদের শিরীন আখতার খালেদা জিয়ার সাজায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “এই রায়ে মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। এই রায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার কোনো সম্পর্ক নেই। খালেদা জিয়ার পুরো জীবনটা মিথ্যা ও দুর্নীতিতে ভরা। গণতন্ত্রের প্রতি তার কোনো শ্রদ্ধা নেই।”

জাসদের নাজমুল হক প্রধান বলেন, “খালেদা জিয়ার সাজার মধ্য দিয়ে জাতির প্রত্যাশিত রায় হয়েছে। এই রায়কে নিয়ে দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করলে, নৈরাজ্য করলে জনগণ তা প্রতিহত করবে।”

সাজা মেনে খালেদা জিয়াকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এই রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই।”

সরকারি দলের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী বলেন, “এ রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রায়, এতিমের অধিকার প্রতিষ্ঠার রায়, আমানত খেয়ানত করলে তার পরিনতি কী হয় তা প্রমাণের রায়। খালেদা জিয়ার রায় সকল দুর্নীতিবাজদের জন্য একটি বার্তা হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে।”

জাতীয় পার্টির ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, “ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। বেগম জিয়া একদিন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিনা অপরাধে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস সেই জেলখানায় এখন খালেদা জিয়া।

“আজ থেকে ২৮ বছর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি বরই গাছ লাগিয়েছিলেন। সেই গাছে এখন বরই ধরেছে। কারাবিধান অনুযায়ী এই বরই খাওয়া যাবে কিনা জানি না। সুযোগ থাকলে খালেদা জিয়াকে সেই বরই খেতে দেওয়া হোক।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, “ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তবে যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের জন্য খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে তা জিয়া পরিবারের লুটপাট করা অর্থের তুলনায় খুবই সামান্য। এতিমদের হক মেরে খাওয়ায় পঁচা শামুকে তার পা কেটেছে।”