আদালতমুখী খালেদার পথে সংঘাত

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের আগে গুলশানের বাসা থেকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আদালতে পৌঁছেছেন এ মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2018, 05:48 AM
Updated : 8 Feb 2018, 01:54 PM

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের জন্য খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার পথে হঠাৎ রাস্তায় নেমে তার গাড়ি ঘিরে মিছিল করতে থাকা কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে টিয়ার শেল ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে সরিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এফডিসি মোড় থেকে নাজিমউদ্দিন রোড পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পোড়ানো হয়েছে কয়েকটি যানবাহন। 

শেষ পর্যন্ত এ মামলার রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার।

এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে নেওয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা; বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকায় সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় মোটর সাইকেলে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ বিএনপিকর্মীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

গুলশানের বাসা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টায় খালেদা জিয়ার আদালতের পথে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও তিনি বের হন পৌনে ১২টায়।

এ সময় ব্যক্তিগত গাড়িতে তার সঙ্গে ছিলেন বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। খালেদার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীদের পাঁচটি গাড়ির সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩টি গাড়ি ছিল সেই বহরে।

গুলশান-২ নম্বরের বাসা থেকে গুলশান-১, তেজগাঁও লিংকরোড, নাবিস্কো ও সাতরাস্তা হয়ে গাড়িবহর নির্বিঘ্নেই এফডিসি মোড়ে পৌঁছায়। সেখানে হঠাৎ কয়েক শ নেতাকর্মী গাড়িবহরের পথ আগলে অবস্থান নেয়।

বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদার গাড়ি ঘিরে স্লোগান দিতে দিতে এগোতে থাকে। তাদের ভিড়ের কারণে গাড়ির গতি ধীর হয়ে যায়।

মগবাজারের বিভিন্ন অলিগলি থেকে আরও কিছু নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে যোগ দেন। বিএনপিকর্মীদের বেশিরভাগ পায়ে হেঁটে এগোলেও মগবাজার পার হওয়ার পর কিছু মোটরসাইকেলও যোগ হয়।

এ সময় ভিড়ের মধ্যে দেখা যায় হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে, যার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছিল।

আদালতমুখী খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কাকরাইল চার্চ অতিক্রম করার আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

মিছিল থেকে ‘আমার নেত্রী আমার মা/বন্দি হতে দেব না’, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো’; ‘খালেদা খালেদা, জিয়া জিয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

দলীয় নেতাকর্মীদের ঘেরাওয়ের মধ্যে গাড়িবহর কাকরাইল মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের উপর চড়াও হয়। পুলিশের টিয়ার শেল আর ইট-পাটকেলের বিপরীতে নেতাকর্মীদের ঢিল ছুড়তে দেখা যায়।

এ সময় সেখানে অন্তত দুটি মটর সাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ আটক করে কয়েকজনকে।

বেশ কয়েক মিনিট সংঘর্ষ চলার পর বিএনপিকর্মীরা পিছু হঠলে খালেদার গাড়িবহর কাকরাইল থেকে মৎস্য ভবন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও শিক্ষা চত্বর হয়ে দোয়েল চত্বর পার হয়ে বকশীবাজারের দিকে এগোয়।

হাই কোর্টের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভেতর থেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলেও বের হতে পারেননি। পুলিশ আগে থেকে দুটি ফটকই বন্ধ করে রাখে। সেখানে আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

দোয়েল চত্বর হয়ে খালেদার গাড়িবহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সামনের সড়ক ধরে চাঁনখারপুল মোড়ে পৌঁছালে সেখানে আবার সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের সঙ্গে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নাজিমউদ্দিন সড়কে বিক্ষুব্ধ বিএনপিকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

নাজিমুদ্দিন রোডে বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে।

খালেদা জিয়ার গাড়ি আদালত প্রাঙ্গণে চলে যাওয়ার পর চানখারপুল এলাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে সংর্ঘষ। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খালেদা জিয়ার বহরে থাকা লোকজন কাকরাইল চার্চের সামনে পুলিশের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা সাংবাদিকের একটি মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়।

এ অবস্থায় পুলিশ জানমাল রক্ষায় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।”