‘শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক’ আন্দোলনের নির্দেশনা খালেদার

মামলার রায়ে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ী খালেদা জিয়া ‘শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক’ আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2018, 01:18 PM
Updated : 7 Feb 2018, 01:41 PM

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় রায়ের আগের দিন বুধবার নিজের গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই নির্দেশনা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

আদালতের উপর সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, তার কোনো ‘অপরাধ না থাকলেও’ রায়ে তিনি ন্যায়বিচার নাও পেতে পারেন।

খালেদা বলেন, “দেশবাসীর প্রতি আমার আবেদন, আমাকে আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলেও বিশ্বাস করবেন, আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি।

“আপনারা গণতন্ত্রের জন্য, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, জনগণের সরকার কায়েমের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।”

সম্প্রতি পুলিশের উপর এভাবে চড়াও হয়েছিল বিএনপিকর্মীরা

 

সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে খালেদা বলেন, “আগামীতে অনেক ফাঁদ পাতা হবে, অনেক ষড়যন্ত্র হবে, সবাই সাবধান ও সর্তক থাকবেন। বুঝে-শুনে কাজ করবেন।

“এদেশ আমাদের সকলের। কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। আমরা সংঘাত, হানাহানি, নৈরাজ্য চাই না। আমরা শান্তি চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।”

‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে’ ছাত্র-জনতাকে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

২০১৪ ও ২০১৫ সালে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি জোটের আন্দোলনে ব্যাপক নাশকতার প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তেমন পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন অনেকে।

সম্প্রতি খালেদার আদালতে হাজিরার সময় পুলিশের উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রায়ের আগে সেই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ঢাকায় বৃহস্পতিবার মিছিল-জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এক মিথ্যা মামলায় আগামীকাল রায় হবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে শাসক দল আমাদের চেয়ে ভীত হয়ে প্রতিবাদের অধিকার, মিছিলের অধিকার প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ করেছে।

“জনগণের প্রতিবাদের ভয়ে ভীত হয়ে হীন পথ খুঁজে নিয়েছে এই অবৈধ সরকার। সারাদেশে তারা বিভীষিকা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।”

নাশকতার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে খালেদা বলেন, “যারা গানপাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে বাস যাত্রী পুড়িয়ে মারে, যারা আন্দোলনের নামে বাসে আগুন, পেট্রোল পাম্পে আগুন, রেল স্টেশন পুড়িয়ে দিয়েছে, তারাই আজ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে।

“আমরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না। সারাদেশে প্রকাশ্যে সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে নেমেছিল বিএনপি জোট; পরের বছর নেমেছিল সরকার পতনের আন্দোলনে।

দুটোতেই ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনের সামনে এসে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব তুলেছে।

সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে খালেদা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখনও আমরা আশা করে বসে আছি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। সেই প্রত্যশা রেখে আহ্বান জানাই, হুমকি-ধমকি ও নির্যাতনের পথ ছেড়ে আসুন। আসুন আমরা আলোচনার মাধ্যমে শান্তির পথে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করি।

“এ নির্বাচন কাউকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ এবং কাউকে ক্ষমতায় বসানোর নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন হবে জনগণের রায় নিয়ে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্বাচন। আমাদের বয়স হয়েছে, আসুন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সম্ভা্বনাময় দেশ রেখে যাই।”

বর্তমান সরকার দেশকে ‘বৃহত্তর কারাগারে’ পরিণত করেছে দাবি করে তা থেকে উত্তরণে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপিনেত্রী।

রায়ের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি।

“আদালত রায় দেওয়ার বহু আগেই শাসক মহল চিৎকার করে বলে বেড়াচ্ছে, ‘আমার জেল হবে’। যেন বিচারক নয়, শাসক মহলই রায় ঠিক করে দিচ্ছে।”

সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেত্রীল সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।