রবার্ট জেলিক অপদার্থ-বাজে লোক: মুহিত

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলার প্রসঙ্গ ধরে বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জেলিককে ‘অপদার্থ’ বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2018, 11:49 AM
Updated : 5 Feb 2018, 12:19 PM

সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তখন পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করায় জেলিককে ‘অসম্ভব বাজে লোক’ও বলেন মুহিত।

২০১১ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে সরকারের টানাপড়েনের সময় বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেলিক। পরের বছর তার চাকরি শেষ হওয়ার ঠিক আগে বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিল করে যান তিনি।

মুহিত বলেন, “আমরা ক্ষমতায় আসার দুই বছরের মাথায় ২০১১ সালে আমরা একটা মহা সঙ্কটে পড়েছিলাম।

রবার্ট জেলিক

“সেই অপদার্থটা তার চাকরির শেষ দিন বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিযোগ করল যে আমরা কোনো একটি কনসালটেন্টকে নিয়োগ করার জন্য চক্রান্ত করছি। ঘুষ নেওয়ার চক্রান্ত করছি। এই বলে পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিল করে দিল। চাকরির শেষ দিনে শেষ মূহুর্তে এ কাজটা করল!”

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলার পর তাদের সঙ্গে টানাপড়েন দেখা দেয়; এক পর্যায়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ না নিয়েই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে সরকার।    

মুহিত বলেন, “আমরা তখন অনেক চেষ্টা করেছি বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য। বিশ্ব ব্যাংককে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি তখন। তার কারণ বিশ্ব ব্যাংক আমাদের সবচেয়ে বড় দাতাসংস্থা।

“প্রধানমন্ত্রী প্রথম দিন্ই বলেছিলেন যে আমাদের এই ঋণের দরকার নেই। তখন আমি বললাম যে, না এই অভিযোগটা যে ভুল, সেটা প্রমাণ করতে চাই। সেই ঘুষের জন্য ষড়যন্ত্রের অভিযোগের যুদ্ধ আমরা অনেক দিন চালিয়ে গেলাম।”

পদ্মা প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কানাডার আদালতে মামলা হলেও তাতে কিছুর প্রমাণ মেলেনি। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন সংস্থা তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে আসামি করে মামলা করলেও পরে তদন্তে অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ার কথা জানায়।

সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ভ্যাট সম্মাননা সনদ’ দেওয়ার যে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রসঙ্গটি তোলেন, সেই অনুষ্ঠানে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে মোশাররফও ছিলেন।

মুহিত বলেন, “আজকের অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও যোগাযোগ সচিব, বর্তমানে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং আমি নিজে। এই চারজনই আমরা উপস্থিত।

“আমরা চারজনই জেলিকের চক্রান্তের মধ্যে পড়ে যাই। প্রকাশ্যভাবে আমরা পাঁচজন পড়ে যাই। প্রথম জন হচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।”

বিশ্ব ব্যাংক তখন একটি তালিকা পাঠিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আরও বহু লোকের নাম ছিল। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এরকমও অনেকের নাম ছিল।

জটিলতা পেরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে যাওয়ায় সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন মুহিত।  

“খুশির খবর হল সেই পদ্মা সেতু আমাদের নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমার ধারণা আগামী ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে আপনারা পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে পদ্মা অতিক্রম করতে পারবেন।”

কর বাড়াতে আরও উদ্যোগ চান মুহিত

দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তা কমে যাওয়ায় উন্নয়নের জন্য কর আদায় বাড়াতে আরও উদ্যোগী হতে এনবিআরকে আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

তিনি বলেন, “তখন (দেশের জন্মলগ্নে) দাতাদের কাছ থেকে আমরা যা পেতাম, সেটা আমাদের জাতীয় আয়ের প্রায় ৯-১০ শতাংশের মতো ছিল। এখন ১ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। তবে গত কয়েক বছরে তা কিছুটা বেড়ে ২ থেকে আড়াই শতাংশের মতো হতে পারে।

“এখন আমরা প্রায় ২০০ কোটি ডলারের মতো প্রতিবছর তাদের কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে পাই।”

বাজেটের আকার ৯৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত করতে পারলেও জাতীয় আয়ের অনুপাত হিসেবে করের অবদান এখনও সারা বিশ্বের নিম্নতম পর্যায়ে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী ও কর বাহাদুর পরিবার স্বীকৃতি পেয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

“কর হার বাড়ানোর জন্য আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। করদাতাদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যেটা বছর তিনেক আগেও ১৪ লাখ ছিল। সেটা এখন ৩৩ লাখ।”

ভ্যাটের নতুন হার কার্যকর করতে না পারার হতাশাও ফুটে ওঠে মুহিতের কণ্ঠে।

“আমরা আরও কিছু সংস্কার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী সেটা দুই বছরের জন্য স্থগিত করে দেন।”

অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে ঢাকা জেলা ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ‘কর বাহাদুর পরিবার’র সনদ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী হিসেবে ১০ প্রতিষ্ঠানকে সনদ দেওয়া হয়। শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চারটিই প্রাণ গ্রুপের।

সনদ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, র‌্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্স, হাতিল কমপ্লেক্স, সিপি বাংলাদেশ, আরএফএল প্লাস্টিকস, বাটারফ্লাই মার্কেটিং, ডিউরেবল প্লাস্টিক, আকতার ম্যাট্রেস, রংপুর মেটাল এবং এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি।