প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার বাধ্যবাধকতা নেই: আইনমন্ত্রী

প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সংবিধানে জ্যেষ্ঠতার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, নতুন প্রধান বিচারপতির নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমীচীন হবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2018, 09:44 AM
Updated : 4 Feb 2018, 12:33 PM

রাজধানীর লেকশোর হোটেলে রোববার এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্য আসে।

আনিসুল হক বলেন, “আমার ঘোর আপত্তি এই কথায় যে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। আপনারা যদি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান দেখেন, তাহলে ৯৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা আছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।

“সেখানে কোথাও লেখা নাই যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি নিয়োগ দেবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেই সিদ্ধান্তে আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।”

বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, “প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করিবেন।”

আপিল বিভাগের বিচারক সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে গত শুক্রবার দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি শপথ নেন।

সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর পদত্যাগ করেন বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা, যিনি বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার চাকরির মেয়াদ ছিল আরও ১০ মাস। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তার দুই বছর পরে হাই কোর্টে যোগ দিলেও আপিল বিভাগের বিচারক পদে তারা যোগ দিয়েছিলেন একই সঙ্গে।

শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে এবং আইনজীবী সমিতি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে। তারপরও ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে’ নিয়োগ পাওয়া নতুন প্রধান বিচারপতিকে সমিতি অভিনন্দন জানাচ্ছে।

ওয়াহহাব মিঞার পদত্যাগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “একজন বিচারপতি, তিনি পদত্যাগ করতে পারেন, তার সেই পদত্যাগ করার অভিপ্রায় তিনি ব্যক্ত করেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, সেখানে আমার কিছু বলার নাই।”         

বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার পদত্যাগের পর আপিল বিভাগে এখন বিচারক হিসেবে আছেন বিচারপতি মাহমুদ হোসেনসহ চারজন।

বিচারপতি সঙ্কটের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আপনারা শিগগিরিই দেখবেন, হাই কোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে বিচারপিত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শনিবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে বলেন, নিম্ন আদালত সরকারের ‘কব্জায়’ থাকায় ‘সঠিক রায় দেওয়ার ক্ষমতা’ বিচারকদের নেই। 

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “উনি যে কথা বলেছেন সেটা অসত্য। আমরা সকলেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এবং বিচারালয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আমার মনে হয় সকলের সেটাই ব্যক্ত করা উচিত। আমি দুঃখিত যে উনি এ কথাটা বলেছেন, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ অসত্য।

“আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, বিচার হয়েছে আদালতে, সাক্ষ্যপ্রমাণ হয়েছে এবং সেই সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ ও বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক তার রায় দেবেন। এটুকুই আমি জানি, এর থেকে বেশি জানি না।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন আয়োজিত ‘হিউম্যান রাইটস, সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং অ্যান্ড রেসপন্সিবল বিজনেস কনডাক্ট- হোয়াট ডাজ বিজনেস নিড টু নো’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন আইনমন্ত্রী।