আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস: আবেদনের স্তূপ জমছে ইসিতে

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস করে এখনও খসড়া প্রকাশ না হলেও বিদ্যমান সীমানা বহাল কিংবা পরিবর্তন চেয়ে শত শত আবেদন জমা পড়ছে নির্বাচন কমিশনে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2018, 04:35 AM
Updated : 3 Feb 2018, 04:35 AM

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ৬৪ জেলার অধিকাংশ আসন নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন করছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ‘সাধারণ নাগরিক’রাও আছেন আবেদনকারীর তালিকায়।

একই আসনের ছোট একটা ওয়ার্ড কিংবা ইউনিয়ন বা উপজেলাকে অন্য আসনে নেওয়ার দাবি যেমন এসেছে; তেমনি এখন আসন সীমানা যেভাবে আছে, তা বহাল রাখারও আবেদনও করেছেন অনেকে।

আসন সীমানার পুনর্বিন্যাস নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থান ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে উঠে এসেছে।

সংলাপে পাওয়া সুপারিশ মাথায় রেখেই ইসির ‘সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত কমিটি’ আগামী নির্বাচনের জন্য আসন সীমানার খসড়া তৈরির কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এ কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই আবেদন করেছেন। আপাতত আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে পুনর্বিন্যস্ত আসনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা।”

ফলে হাতে থাকা আবেদনগুলো এখনই বিবেচনায় নেওয়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে তিনি বলেন, “খসড়া প্রকাশের পর দাবি বা আপত্তি জানানোর জন্যে সময় দেওয়া হবে। তখন প্রতিটি আবেদনই বিবেচনায় নিয়ে নিষ্পত্তি করার সুযোগ রয়েছে।”

নির্বাচন কমিশনের সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিনই সীমানা নিয়ে আবেদন জমা পড়ছে। কেউ ডাকে পাঠাচ্ছেন, কেউ আবার নিজে হাতে দিয়ে যাচ্ছেন।

সেসব আবেদন জেলাভিত্তিক ফাইল করে রাখছেন ইসি কর্মকর্তারা।  এর মধ্যে নরসিংদী জেলায় সীমানা নিয়েই ১০৫টি আবেদন এসেছে।

এছাড়া পিরোজপুর জেলায়  ৫৬টি; গাজীপুর, কুমিল্লা ও বরিশালে ১৪ থেকে ১৬টি এবং ঢাকা-১১, ঢাকা-১৮, নারায়ণগঞ্জ-৪, নরসিংদী-৫, গাজীপুর-২, গাজীপুর-৩, গাজীপুর-৫, পাবনা-১, খুলনা-৩, খুলনা-৬, বরিশাল-২, বরিশাল-৩, পিরোজপুর-১, পিরোজপুর-২, পিরোজপুর-৩, বরগুনা-২, বরগুনা-৩, ভোলা-২, পটুয়াখালী-৩, শেরপুর-৩, কিশোরগঞ্জ-১, কুড়িগ্রাম-৩, কুড়িগ্রাম-৪, কুমিল্লা-১, কুমিল্লা-২, কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৮, কুমিল্লা-১০, কুমিল্লা-৯ আসন নিয়েও আবেদন পড়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংসদ মন্নুজান সুফিয়ান খুলনার দুটি ইউনিয়নকে খুলনা-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেছেন।

২০১৩ সালে পিরোজপুর জেলার আসন সীমানা ‘সঠিক না হওয়ার’ অভিযোগ জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের আরেক নেতা ইসহাক আলী খান পান্না তা পুনর্বিন্যাসের আবেদন জানিয়েছেন।

সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম মণি বরগুনা-২ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস চেয়েছেন। আর সাবেক সাংসদ আবদুল মজিদ মল্লিক বরগুনা-৩ আসনের বর্তমান সীমানা অটুট রাখার দাবি জানিয়েছেন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ক্ষেত্রেও বর্তমান সীমানা বহাল চেয়েছেন সাবেক সাংসদ গোলাম হাবিব।

সাংসদ তাজুল ইসলাম কুমিল্লা-১০ আসনে পরিবর্তন এনে কুমিল্লা-৯ আসন আগের সীমানায় চান। আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা-৬ আসনে পরিবর্তন চান। নুরুল ইসলাম মিলন-কুমিল্লা-৮ আসনের বর্তমান সীমানা বহাল চান। কুমিল্লা-৯ আসন আগের সীমানায় ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করেছেন মনিরুল হক চৌধুরী।

নাঙ্গলকোট উপজেলা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে দুটি আসন চেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার।

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদ্যমান অধ্যাদেশের আলোকে ৩০০ আসন পর্যালোচনা করেই কাজ করছি। কুমিল্লার একটি সংদীয় আসন নিয়ে আদালতে মামলা চলছে, কমিশন আপিলও করেছে। তার নিষ্পত্তি হলেই খসড়াও দ্রুত প্রকাশ করা সম্ভব হবে।“

জনসংখ্যার ভারসাম্য, প্রশাসনিক সুবিধা এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার কথা বিবেচনায় নিয়েই এসব সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজটি করা হবে বলে জানান তিনি। 

এ বছরের ৩০ অক্টেবর থেকে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অন্তত ছয় মাস আগেই সংসদীয় আসনের সীমানার গেজেট প্রকাশ করতে হয়। ফেব্রুয়ারির মধ্যে খড়সা করা গেলে মার্চে দাবি-আপত্তি এবং এপ্রিলে শুনানি শেষ করা যাবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এর আগে বলেছিলেন, “সংসদীয় সীমানা সংক্রান্ত কমিটি সার্বিক বিষয় গুছিয়ে রাখতে কাজ করছে। কমিশন সভায় উপস্থাপিত হলে এ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব। তবে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুনর্বিন্যস্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করার পরিকল্পনা আমাদের।”

সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালে প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৫০ আসনে পরিবর্তন করা হয়।

সেবার ৮৭টি আসনে পরিবর্তন এনে ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়, মার্চে দাবি-আপত্তির সময় রাখা হয়। ২৩ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বিভাগীয় শুনানি চলে। ৮৯৪টি আপত্তি-দাবির আবেদন জমা পড়ে।

৩ জুলাই ৩০০ আসনের যে গেজেট প্রকাশ করা হয়, তাতে ২৫০ আসনের সীমানা বহাল রেখে ৫০ আসনে পরিবর্তন আনা হয়।

এর আগে নবম সংসদে সীমানা পুননির্ধারণ নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দাবি-আপত্তি জমা পড়েছিল।