জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানি ২৪ দিন মুলতবি

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি ২৪ দিন মুলতবি করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2018, 12:59 PM
Updated : 12 Feb 2018, 04:08 PM

এই মামলায় বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানির পর  তিনি আগামী ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করেন।

বিচারক আখতারুজ্জামানই আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় রায় দেবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলায় রায়ের দিন ঠিক হওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার মধ্যেই অন্য মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি নিচ্ছেন এই বিচারক। বুধবার দুই পক্ষের আইনজীবীদের তর্কাতর্কিতে বিচারক আখতারুজ্জামানও উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। 

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে দুটি মামলার বিচার চলছে।

আগের দিনের মতো সকালে আদালতে উপস্থিত হন আসামি খালেদা জিয়া। তিনি পৌঁছার পর ১১টা ৩০ মিনিটে বিচারক এজলাসে উঠেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী নূরুজ্জামান তপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খালেদা জিয়া এদিন হাই কোর্ট হয়ে ফেরেননি। পুলিশ গাড়িবহর ফুলবাড়িয়া থেকে ঘুরিয়ে দেয়।

দুদিন আগে তার ফেরার সময় হাই কোর্ট এলাকায় জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্য মারধরের শিকার হন, ভাংচুর হয় তাদের গাড়ি-অস্ত্র।

এদিন মামলার কার্যক্রমের প্রথমে আসামি জিয়াউল হক মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম তদন্ত কর্মকতা হারুন অর রশিদকে জেরা শুরু করেন।

ট্রাস্ট গঠনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে অ্যাডভোকেট আমিন বলেন, ১৯৯৩ সালে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করা হয়। এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মতিন চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমানসহ সাতজন মিলে এটি গঠন করেন। ট্রাস্টের নামে সোনালী ব্যাংক ফকিরাপুল শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়, যেখানে নেতা-কর্মীরা অনুদান দিতেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপি ছাড়ার পর ওই ট্রাস্টই নতুন করে ২০০৪ সালে রেজিস্ট্রার্ড ট্রাস্ট হিসেবে গঠন করা হয় বলে এই আইনজীবী জানান।

“প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাখায় একটি একাউন্ট খোলা হয়। এরপর ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ফকিরাপুলের পূর্বের হিসাব থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাখায় টাকা আসে। এখানে কোথায় অপরাধ?”

অ্যাডভোকেট আমিন বলেন, “দুদক আইন অনুযায়ী দুদকের কোনো কর্মকর্তাকে কোনো মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিতে হলে তা গেজেট প্রকাশ করতে হবে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটা করা হয়নি।

“তদন্ত কর্মকর্তা তা আদালতে জেরায় স্বীকারও করেছেন। বিজ্ঞ আদালত হয়ত বলবেন আপনারা এর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে গিয়ে সফল হননি। আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গিয়ে সফল না হলেও মননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মামলায় তাকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি এই কারণে মামলা কোয়াশড হয়েছে। আমরা মাননীয় আদালতকে বিষয়টি শুধু জানালাম।”

এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তিনি বলেন, “ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনের সরকার এই ট্রাস্টে দুর্নীতির গন্ধ না পেলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই দুর্নীতির গন্ধ পেলেন।

“অভিযোগপত্রে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দুর্নীতির অভিযোগ করলেন। কিন্তু টাকাটা কোথা থেকে এল, তারা তার উৎস খুঁজে পেলেন না। উৎস যদি না দেখাতে পারেন, তবে অপরাধ কীভাবে হবে? হাওয়ার উপর মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিল করে দিলেন।

“আবার আমরা যখন ডকুমেন্ট দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি যে, এগুলো পার্টি ফান্ডের টাকা, তাও গ্রহণ করবেন না।”

আসামি মুন্নার আইনজীবী আমিন বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “প্রসিকিউশন বুধবার অভিযোগ করেছেন, আমি নিজের আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন না করে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করি। আমার আসামি তার অধীনে চাকুরি করেছেন। তাই তিনি খালাস পেলেই আমার আসামির বড় প্রাপ্তি হবে।”

বেলা দেড়টার দিকে আইনজীবী আমিন মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য আদালতের কার্যক্রমে বিরতি চান।

ওই সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, “এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে তাই আজকের (বৃহস্পতিবার) মতো থাক।”

এরপর বিচারক বলেন, “আজ  আর শুনব না। পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপন আগামী ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি।”

এরপরই এজলাস ছেড়ে যান বিচারক আখতারুজ্জামান।

বুধবার দুদকের পক্ষে কাজল দুই ঘণ্টায় যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। তিনি আসামি খালেদার সাত বছর কারাদণ্ড চেয়ে আবেদন করেন।

২০১১ সালের ৮ অগাস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়।

মামলাটিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব (বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক) জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।