সংবাদকর্মীদের বেতন বাড়াতে নতুন ওয়েজবোর্ড

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করেছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2018, 10:18 AM
Updated : 29 Jan 2018, 04:05 PM

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে সোমবার তথ্য মন্ত্রণালয় ১৩ সদস্যের এই ওয়েজবোর্ড গঠন করে আদেশ জারি করেছে।

ভারপ্রাপ্ত তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ নতুন ওয়েজবোর্ড গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সোমবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ওয়েজবোর্ডের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।”

আদেশে বলা হয়েছে, নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড গঠনের ছয় মাসের মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের বিষয়টি আইনগত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই বোর্ড সুপারিশ দেবে।

“প্রস্তাবিত ওয়েজবোর্ড প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সংবাদপত্র কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের বিষয় বিবেচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করতে পারবে।”

রাতে তথ্য অধিদপ্তর জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে ওয়েজবোর্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সাংবাদিকদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে ২০১২ সালের ১৮ জুন অষ্টম ওয়েজবোর্ড গঠন করেছিল সরকার। এর কয়েক মাস পর ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যা ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হয়।

আগের ওয়েজবোর্ড গঠনের ৫ বছর ৭ মাসেরও বেশি সময় পর নতুন ওয়েজবোর্ড গঠন করল সরকার।

পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো দিতে আট মাসের কম সময় পাবে তথ্য মন্ত্রণালয়। অষ্টম ওয়েজবোর্ড গঠনের ১৫ মাস পর নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট হয়েছিল।

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন গড়ে তাদের মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অষ্টম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার, যা ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণার দাবিতে সমাবেশ (ফাইল ছবি)

২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকে নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এই দাবিতে দীর্ঘ দিন কর্মসূচিও পালন করে তারা।

নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের কাজ এগিয়ে নিলেও সংবাদপত্রের মালিক সংগঠন নোয়াবের প্রতিনিধি না পাওয়ায় নতুন ওয়েজবোর্ড গঠন করতে পারছিল না তথ্য মন্ত্রণালয়।

কয়েক দফা সময় বেঁধে দিয়েও ওয়েজবোর্ড গঠন না করায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন; জাতীয় প্রেসক্লাবে তথ্যমন্ত্রীকে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হয়।

বোর্ডে আছেন যারা

বোর্ডে সংবাদপত্র মালিকদের একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের প্রাধান্য রয়েছে। এটি হল নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব), যার সদস্য সংখ্যা ১৫ এর কম।

এই সংগঠনটির সভাপতি মতিউর রহমান, সহসভাপতি এ কে আজাদ, কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরী, সদস্য মাহফুজ আনাম ও তাসমীমা হোসেনকে বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে।

সংবাদপত্র মালিকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের আহ্বায়ক এম জি কিবরিয়া চৌধুরী বোর্ডে স্থান পেয়েছেন।

দেশে বিপুল সংখ্যক ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম থাকলেও তাদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি বোর্ডে।

সংবাদকর্মীদের মধ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব ওমর ফারুক, বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. মতিউর রহমান তালুকদার ও মহাসচিব মো. খায়রুল ইসলাম, বাংলাদেশে ফেডারেল ইউনিয়ন অব নিউজপোপার প্রেস ওয়ার্কার্সের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন খান ও মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিনকে বোর্ডে রাখা হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (প্রেস) মো. মিজান-উল আলম নবম ওয়েজবোর্ড মজুরি বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তথ্য মন্ত্রণালয় নবম সংবাদপত্র মজুরিবোর্ডকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

আদেশে বলা হয়েছে, “নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ পর্যালোচনা করে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় নিয়োজিত সাংবাদিক, সাধারণ কর্মচারী ও প্রেস শ্রমিকদের জন্য বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সুপারিশ করবে।

“সুপারিশ প্রণয়নকালে সংবাদপত্র মজুরিবোর্ড সংবাদপত্রে বিদ্যমান আর্থিক অবস্থা ও সক্ষমতা, জীবনযাত্রার ব্যয়, সরকার, করপোরেশন এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সমতুল্য চাকরির মজুরির বিরাজমান হার, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল/এলাকার সংবাদ শিল্পের বিদ্যমান অবস্থা এবং বোর্ডের বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক অন্যান্য অবস্থা বিবেচনা করে দেখবে।”

অষ্টম ওয়েজবোর্ডের সুপারিশ