মাতারবাড়ির নির্মাণযজ্ঞ শুরু

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2018, 07:36 AM
Updated : 28 Jan 2018, 08:30 AM

রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন।

জাইকার ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতসহ জাপানি প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন গণভবনের এ অনুষ্ঠানে। আর মহেশখালীতে ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ আরেকটি প্রতিনিধি দল।

জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদ্যুত নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনায় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়িকে ‘বিদ্যুৎ হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা রয়েছে।

পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় যে বন্দর নির্মাণ করা হবে, পরে তাকে গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত করা হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সরকার আশা করছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে মাতারবাড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে।

মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুত প্রকল্পটির প্রাথমিক অবকাঠামোর ১৭ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্মাণ কাজ শুরু হল।

আবুল কাশেম জানান, মাতারবাড়ি প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে ৪০০ বিদেশি শ্রমিক এসেছে। পর্যায়ক্রমে এখানে প্রায় এক হাজার বিদেশি শ্রমিক কাজ করবে।

গুলশান হামলার ঘটনায় সাতজন জাপানি প্রকৌশলীর মৃত্যুর ঘটনায় মাতারবাড়ি প্রকল্পও পিছিয়ে যায়। সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ (সিপিজিসিবিএল)।

আবুল কাশেম বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের।

তবে জাপানি কনসোর্টিয়ামের অন্যতম কোম্পানি তোশিবা করপোরেশন গত বছর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মধ্যে।

সরকারের অগ্রাধিকারের ১০ প্রকল্পের রয়েছে খরচের দিক দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরই রয়েছে মাতারবাড়ির প্রকল্পটি।

২০১৫ সালের অগাস্টে মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়, জাইকা এই প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে।

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ একটি গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন থেকেই দেখা দিয়েছে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার মহেশখালীর সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রকল্প অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে রাখলেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি।

গত সাত বছরে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি ২০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। দুটি বন্দর দিয়ে ক্রমবর্ধমান এ বাণিজ্য সামাল দেওয়া প্রায় ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠেছে। তাই গভীর সমুদ্র বন্দরে নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকেও জোরেশোরেই কাজ করতে হচ্ছে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমদানি করা কয়লানির্ভর হওয়ায় কয়লা আনার জন্যই এই বন্দর করা হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ৫৯ ফুট গভীর এই বন্দরে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে।

গণভবনে অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্পে নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ‍উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।