কথাসাহিত্যিক শওকত আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
Published : 25 Jan 2018, 08:20 AM
তার ছেলে আসিফ শওকত কল্লোল জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
ফুসফুসের সংক্রমণ, কিডনি জটিলতা ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে গত ৪ জানুয়ারি ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শওকত আলী।
প্রথমে আইসিইউতে রাখা হলেও পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। পরে ১৬ জানুয়ারি তাকে ল্যাব এইড থেকে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাহিত্যিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় বলেছেন, শওকত আলীর মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
শওকত আলীর মৃত্যুর খবরে দেশের শিল্প সাহিত্যের অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। লেখক খালেকুজ্জামান ইলিয়াস, নাট্যকার মঈন উদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা হারুন-উর-রশীদ, জাতীয় গণফ্রন্টের নেতা রজত হুদা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, শওকত আলীর শ্রুতিলেখক আব্দুস সাত্তারসহ বন্ধু ও স্বজনরা ছুটে আসেন হাসপাতালে।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে শওকত আলীর কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
উপাচার্য পরে সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি যখন আমাদের এখনে ভর্তি হয়েছিলেন খুব খারাপ অবস্থায় ছিলেন; তার ওভারঅল কন্ডিশন ভাল ছিল না। তারপরও আমাদের যতটা সুযোগ ছিল আমরা তার জন্য চেষ্টা করেছি।”
সেখানে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিকালে জুরাইন কবরস্থানে শওকত আলীকে দাফন করা হবে বলে তার ছেলে আরিফ শওকত পল্লব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার থানা শহর রায়গঞ্জে জন্ম নেন শওকত আলী।
প্রথম জীবনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন তিনি। কিন্তু কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় পরে তিনি মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
কলেজের ছাত্র জীবনেই তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এর কিছুদিন পরেই তিনি জড়িয়ে পড়েন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাকে বন্দি করে জেলে পাঠায় পাকিস্তানের সামরিক জান্তা।
পরে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও কিছুদিন পরে শিক্ষকতায় যোগ দেন তিনি। বামপন্থিদের ‘নতুন সাহিত্য’ পত্রিকায় তিনি লেখালেখি করেছেন। দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল, ইত্তেফাকে তার অনেক গল্প, কবিতা ও শিশুতোষ লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
শওকত আলী তার ‘ওয়ারিশ’ উপন্যাসে ব্রিটিশ শাসনামল, দেশভাগ আর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার মর্মন্তুদ ছবি তিনি এঁকেছেন। ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ উপন্যাসে তিনি নিম্নবর্গের মানুষের বঞ্চনার কথা তুলে এনেছেন, পাশাপাশি ফুটিয়ে তুলেছেন শোষকের করাল গ্রাসের বিপরীতে অচ্ছুৎ সম্প্রদায়ের বিপ্লব-বিদ্রোহের চিত্র।
তার উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে, ‘পিঙ্গল আকাশ’, ‘অপেক্ষা’, ‘গন্তব্যে অতঃপর’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘অবশেষে প্রপাত’, ‘জননী ও জাতিকা’, ‘জোড় বিজোড়’।
‘উন্মুল বাসনা’, ‘লেলিহান সাধ’, ‘শুন হে লখিন্দর’, ‘বাবা আপনে যান’সহ বেশ কয়েকটি গল্পগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন তিনি।
‘দক্ষিণায়নের দিন’, ‘কুলায় কালস্রোত’ এবং ‘পূর্বরাত্রি পূর্বদিন’ উপন্যাসত্রয়ীর জন্য শওকত আলী ‘ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার’ পান। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে পান একুশে পদক।
পরে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার, অজিত গুহ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার পান এই সাহিত্যিক।
শওকত আলীর বড় ছেলে ডা. আরিফ শওকত থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। মেজো ছেলে আসিফ শওকত কল্লোল সাংবাদিক। আর ছোট ছেলে কালিফ শওকত একজন ব্যাংকার, সিলেটে থাকেন।