লেকহেড খুলে দিতে ঘুষ লেনদেনের মামলা সেই তিনজনের বিরুদ্ধে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মী এবং ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুলের এক পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2018, 04:57 AM
Updated : 23 Jan 2018, 04:57 AM

জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বন্ধ থাকা ওই স্কুল খুলে দিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার তাদের আদালতে তোলা হবে বলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ওই তিনজনের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন ও লেকহেড গ্রামার স্কুলের অন্যতম মালিক খালেদ হাসান মতিনকে গত শনিবার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছিল। 

রোববার গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই তিনজনই তাদের হেফাজতে আছে। পরে সোমবার রাতে ঢাকার বনানী থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ডিবির এসআই মনিরুল ইসলাম মৃধা।

বনানী থানার এসআই রফিজ উদ্দিন আহমেদ  বলেন, “ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬২ ও ১৬৫ ধারায় দায়ের করা এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।”

ওই তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করে রোববার রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোতালেব ও নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাসিরের কাছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। আর মতিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে।

এই তিনজনের মধ্যে মোতালেব ও মতিনকে শনিবার বিকালে বছিলা ও গুলশান থেকে কয়েকজন ব্যক্তি তুলে নিয়ে যায় বলে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার বনানীর একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখান থেকে বেরোনোর পর দুপুর থেকে নাসিরের খোঁজ মিলছিল না বলে তার পরিবার জানিয়েছিল।

শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নে। আগে থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করলেও দুই বছর আগে নাহিদের পিও হিসেবে বদলি হয়ে তিনি মন্ত্রীর দপ্তরে আসেন।

মোতালেব গ্রিন রোডে সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। বছিলায় নিজস্ব জমিতে তিনি ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। সেখান থেকেই তাকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছিল পরিবার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডে ফাইল চালাচালি করছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব এবং উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন। লেক হেড গ্রামার স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এরা মোটা অংকের টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছিলেন।”

জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে গত নভেম্বরে এই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ করে স্কুলটি চালুর নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরেছে, নিশ্চয়ই কোনো অভিযোগ আছে। সে অভিযোগ কোর্টে প্রমাণ হবে এবং শাস্তি হবে। সেই বিধান অনুসারে আমাদের যে সিস্টেম আছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”