সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এই মানববন্ধন থেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সমন্বয় কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ ও জাজিরা এলাকাবাসী সাংসদের শাস্তিরও দাবি জানায়।
প্রতি বছরের মতো ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানায় আয়োজন করা হয়েছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা।
সভায় এক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ মোজাম্মেল হকের খারাপ আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর আন্দোলনে নামে কয়েকটি সংগঠন।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক মুক্তিযোদ্ধাকে শাসিয়ে সাংসদ মোজাম্মেল বলছেন, “... এর মুক্তিযোদ্ধা, আবার কথা বললে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।”
মুক্তিযোদ্ধাকে সাংসদের এই মন্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “বর্তমানে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও কেন মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানে অপদস্ত করা হচ্ছে, আমাদের কেন রাস্তায় নামতে হচ্ছে, সরকার প্রধানের কাছে আমরা জবাব চাই।
“একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বিএম মোজ্জাম্মেল হক মুক্তিযোদ্ধাকে যে সকল ভাষায় গালি দিয়েছে, এটা কোনোভাবে আমাদের কাম্য নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান অপদস্ত করে তিনি রাষ্ট্রের আইন প্রণেতা হিসেবে থাকতে পারেন না। অতি শিগগিরই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি আসবে।”
মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তির কারণে মোজাম্মেল হকের শাস্তির দাবি জানান মানববন্ধনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সমন্বয় কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ জানাতে আমরা আজ মানববন্ধন করছি। আজকে সব জায়গায় এরকমভাবে বসে আছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। তাদের প্রতিহত করতে হবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করার কারণে বিএম মোজাম্মেল হকের শাস্তি চাই।”
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হকের ভাষ্য, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে জাজিরার মোবারক আলী শিকদার ও আব্দুল হক মুন্সি ‘তার বন্ধু’ ওই মুক্তিযোদ্ধাকে শাসানোর একটি ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল করিয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। জাজিরার মোবারক আলী শিকদার, আব্দুল হক মুন্সি কিছু লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন।
“বাস্তবে যে মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন, আমার বন্ধু। তারা একটি ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল করেছে। ওই মুক্তিযোদ্ধা আরেকজনকে রাজাকার বলায় আমি তাকে শাসিয়েছি। বলেছি, তুমি তো কারো সার্টিফিকেট দিতে পার না।”
সাংসদ মোজাম্মেল বলেন, “আজ একমাস পর ওই চক্রটি সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থাকি, আজকেও ওই মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের নিয়ে একসঙ্গে বসেছি, দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছি, খাওয়া-দাওয়া করেছি। তারা সবাই বলেছেন- আমি তাদের কাছের লোক, আমার পাশে তারা সবসময় আছেন।”
এদিকে সাংসদ মোজাম্মেলের মন্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক কায়সার নাসিম, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রুমা আক্তার বক্তব্য রাখেন।