শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ নিখোঁজ ৩ জন ডিবিতে

শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেনসহ সম্প্রতি ঢাকা থেকে নিখোঁজ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2018, 03:39 PM
Updated : 21 Jan 2018, 06:05 PM

রোববার রাতে মোতালেবকে মোহাম্মদপুরের বছিলা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নাসির উদ্দিন ও লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ডিএমপির উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসিরের কাছে নগদ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোতালেব ও নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মতিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে।

এই তিনজনের মধ্যে মোতালেব ও মতিনকে শনিবার বিকালে বছিলা ও গুলশান থেকে কয়েকজন ব্যক্তি তুলে নিয়ে যায় বলে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার বনানীর একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখান থেকে বেরোনোর পর দুপুর থেকে নাসিরের খোঁজ মিলছিল না বলে তার পরিবার জানিয়েছিল।

শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নে। তিনি গ্রীন রোডে সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। বছিলায় নিজস্ব জমিতে ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করছেন তিনি।

তাকে ‘তুলে নেওয়ার’ ঘটনার বিবরণে পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, বছিলা ব্রিজের কাছে নিজের প্লটে বাড়ির নির্মাণ কাজ দেখতে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মোতালেব সেখানে পৌঁছান।

তিনি যখন বাড়ির নির্মাণ কাজ তদারকি করছিলেন, তখন মাইক্রোবাসে করে চার-পাঁচজন লোক সেখানে যায় এবং দারোয়ানকে বলে, বাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য তারা মোতালেবের সঙ্গে কথা বলতে চায়।

দারোয়ান তাদের জানায়, বাড়িওয়ালা আছেন ভবনের ছাদে। তখন তারা উপরে উঠে যায় এবং কিছু সময় পর বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে কথা বলতে বলতে মোতালেবকে নিয়ে নিচে আসে। নিচে নামিয়ে আনার পর মোতালেবকে তারা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার লেকসিটি কনকর্ড টাওয়ারে। বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিবও তিনি।

নাসিরের ভায়রা নাইম আহমেদ জুলহাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বনানীর ‘আর এম’ নামে একটি গ্রুপে যান নাসির।

“ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে নাসির তার স্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের লোকজনের সাথে কথাও বলেন। কিন্তু দুপুর ২টার পর তার সঙ্গে থাকা দুটি মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।”

আর খালেদ হাসান মতিনকে ‘তুলে নেওয়ার’ কথা জানিয়ে থানায় করা জিডিতে বলা হয়েছে, শনিবার বিকাল ৪টার দিকে গুলশানে তার স্কুলের সামনে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে পাশে থাকা একটি মাইক্রোবাসে তাদের সঙ্গে ওঠেন মতিন। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে গত নভেম্বরে এই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ করে স্কুলটি চালুর নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডে ফাইল চালাচালি করছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন।

“লেক হেড গ্রামার স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এরা মোটা অংকের টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছিলেন।”