ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-ভাংচুরের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার জন্য প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীর পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে মশাল নিয়ে মিছিল করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2018, 05:44 PM
Updated : 19 Jan 2018, 05:44 PM

শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে শতাধিক শিক্ষার্থীর এই মশাল মিছিল টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার সেখানেই শেষ হয়।

মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রক্টরের পদত্যাগ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা ওই মামলা প্রত্যাহার, ‘ছাত্রী নিপীড়নের’ জন্য আট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে অবিলম্বে বহিষ্কার এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান তারা।

সমাবেশে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক হোসেন বলেন, “মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আমাদের বেঁধে দেওয়া সময় রোববারের মধ্যেই বিচার করতে হবে। ছাত্র প্রতিনিধিহীন যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে সেটার প্রতি আমাদের আস্থা নেই।”

রোববার বেলা ১২টায় এই চার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ শেষ করা হয়।

ঢাকার সাত সরকারি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গত সোমবার উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে চড়াও হয় ছাত্রলীগ। ওই দিন ‘হামলাকারী’ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রীদের নিপীড়ন করে বলেও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।

এর প্রতিবাদে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বুধবার প্রক্টর কার্যালয় ঘেরাও করতে যায় একদল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও ওই কর্মসূচিতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের আসতে দেখে ওই কার্যালয়ের ফটকে তালা আটকে দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা কলাপসিবল গেইট ভেঙে ফেলেন।

‘ছাত্রী নিপীড়নে’ জড়িত ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কার এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে তদন্ত কমিটি করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশের দাবিতে প্রক্টরকে তিন ঘণ্টা তারা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান প্রক্টর। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সেখান থেকে ফিরে যায় আন্দোলনকারীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান। এছাড়া কলাভবনে ভাংচুরের ঘটনায় গঠন করা হয়েছে আরেকটি তদন্ত কমিটি।

এই পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামরুল আহসান খান ফটক ভাংচুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতপরিচয় ৫০ জনকে আসামি করা হয় তাতে।

মামলার খবর প্রকাশের পর মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। ‘আমি ভাংচুরকারী আমাকে গ্রেপ্তার কর’ এবং ‘আমি আন্দোলনকারী আমাকে গ্রেপ্তার কর’ লেখা প্ল্যাকার্ড পাশে নিয়ে ভোররাত ৩টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের বেদীতে অবস্থান নেন দুই শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র রাজীব কুমার দাশ এবং অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মাহির শাহরিয়ার রেজার ওই অবস্থান এখনও চলছে। দিনভর একের পর এক তাদের পাশে এসে বসেছেন অনেক শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাত ১১টার দিকেও সেখানে ছয়-সাতজনকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা এবং তাদের প্রতিবাদ নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে প্রক্টর গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রদের নামে কোনো মামলা দেওয়া হয়নি।”

কাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে-প্রশ্ন করা হলে জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, “ওই টুকুই লেখো।”