বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামে ফিরতে পারবে নাকি তাদের ক্যাম্পে থাকতে হবে সে বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার বলে মনে করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, “সবচেয়ে খারাপ বিষয় হবে এই মানুষগুলোকে বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের ক্যাম্পে সরিয়ে নেওয়া।”
গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ঘরে ফেরার পথ করে দিতে মঙ্গলবার মিয়ানমারের সঙ্গে ওই চুক্তি করে বাংলাদেশ।
নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্রের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ওই ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চূড়ান্ত হয়, যাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরতের কথা বলা হয়েছে।
এই চুক্তি হওয়ার দিনই তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চল বিষয়ক পরিচালক জেমস গোমেজ বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এখনও ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের দগদগে ক্ষত থাকায় তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা উদ্বেগ সৃষ্টির মতো ‘অপরিণত সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ’।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ ব্যবস্থার অবসান এবং সেখানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জবাবদিহিসহ দেশটির মৌলিক পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে তাদের ফেরা নিরাপদ বা মর্যাদাপূর্ণ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যে কোনো চুক্তিতে ‘ন্যূনতম শর্ত হিসেবে’ নাগরিকত্ব, চলাচলের স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থানে প্রবেশের সুযোগ থাকতে হবে।
রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শরণার্থীরা ঘরে ফেরার জন্য কাতর হয়ে আছে।
“তবে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এখনও সৃষ্টি না হওয়ায় তারা যেতে চান না।
“আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী সারা বিশ্বের রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ছয় লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছি।”,
আরাকানে সহিংসতার মুখে এখনও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনীর আচরণে এখনও কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হল- আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এআরএনও), বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে (বিআরওইউকে), ব্রিটিশ রোহিঙ্গা কম্যুনিটি ইন ইউকে, বার্মিজ রোহিঙ্গা কম্যুনিটি ইন ডেনমার্ক, বার্মিজ রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন জাপান (বিআরএজে), রোহিঙ্গা অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক ইন জাপান, বার্মিজ রোহিঙ্গা কম্যুনিটি অস্ট্রেলিয়া (বিআরসিএ), বার্মিজ রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন ইন কুইন্সল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া (বিআরএকিউএ), কানাডিয়ান বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন, ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিল (ইআরসি), মিয়ানমার এথনিক রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন ইন মালয়েশিয়া (এমইআরএইচআরওএম), রোহিঙ্গা আমেরিকান সোসাইটি, রোহিঙ্গা আরাকানিজ রিফুজি কমিটি, রোহিঙ্গা কম্যুনিটি ইন জার্মানি, রোহিঙ্গা কম্যুনিটি ইন সুইজারল্যান্ড, রোহিঙ্গা কম্যুনিটি ইন ফিনল্যান্ড, রোহিঙ্গা কম্যুনিটি ইন ইতালি, রোহিঙ্গা কম্যুনিটি ইন সুইডেন, রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন নরওয়ে, রোহিঙ্গা সোসাইটি মালয়েশিয়া (আরএসএম) এবং রোহিঙ্গা সোসাইটি নেদারল্যান্ডস।