বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে দেশের মৌলিক সমস্যার সমাধান চান মন্ত্রী

দেশের বিভিন্ন মৌলিক সমস্যা সমাধানে প্রায়োগিক গবেষণা করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2018, 04:08 PM
Updated : 18 Jan 2018, 05:11 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্ট ‍ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান অনুসন্ধান ও নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে কাজ করতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা জাতির মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে পারে।

“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সে ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”

রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসাবে সমাবর্তনে সভাপতির বক্তৃতায় অর্জিত জ্ঞান ও মেধা সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানো গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

তিনি বলেন, “প্রজ্ঞা ও মেধা যেন সাধারণ মানুষের কাজে ব্যবহার হয়, সমাজে আনতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন। আমি বিশ্বাস করি, দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আপনারা সেটা করতে পারবেন।”

বেসরকারি ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম সমাবর্তনে মোট এক হাজার ৮৪০ শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ১৩৩৫ এবং স্নাতকোত্তরের ৫০৫ জন রয়েছেন। ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনজন চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পান।

সমাবর্তনকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় আফতাবনগরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও আমন্ত্রিত ছিলেন সেখানে।

অর্জিত জ্ঞান বাস্তব কর্মজীবনে প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, “দেশের জন্য ও দশের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবে। স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে এবং বিশ্বের দরবারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে কাজ করবেন।”

সমাবর্তনের পোশাকে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের শর্ত পূরণ করায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসা করে যারা এখনও সেটা করতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে আবারও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষামন্ত্রী।

“কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এভাবে তারা বেশি দিন চলতে পারবেন না। যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, যারা মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে চলতে চান, যারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখনও যাননি, যারা একাধিক ক্যাম্পাসে পাঠদান পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে অব্যাহত চাপ রেখেও সঠিক ধারায় আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।”

সমাবর্তন বক্তৃতায় দেশে পরীক্ষামুখী শিক্ষাব্যবস্থার নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

এক শিক্ষার্থীকে সমাবর্তনের টুপি পরিয়ে দিচ্ছেন তার মা-বাবা।

তিনি বলেন, “শিক্ষা কতটুকু অর্জিত হল তা পরিমাপের জন্য পরীক্ষাকে যদি মানদণ্ড ধরি তাহলে আমরা ভুল করব। আমাদের অভিভাবকরা সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে জানতে চান না, কতটুকু শিক্ষা সে লাভ করল। তিনি শুধু চান, সে পরীক্ষায় কতটুকু নম্বর পেল।

“ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয় আর প্রাইভেট টিউটরের কাছে তার সময় শেষ হয়। খেলাধুলা আর আনন্দ হারিয়ে যেতে থাকে। শৈশব বলতে কিছু তার থাকে না।”

আনিসুজ্জামান বলেন, “পরীক্ষার নম্বর পাওয়ার বিষয়টি এমন বিকারে পরিণত হয়েছে প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত প্রশ্নফাঁস হয়েছে। সন্তান তার মাকে বলে, আমার বন্ধুর মা তাকে প্রশ্ন বলে দিয়েছে, তুমি বলে দিলে না কেন?

সমাবর্তনের পোশাকে উচ্ছ্বসিত এক শিক্ষার্থী

তিনি বলেন, “বিদ্যালয় থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি। এখান থেকে কর্মজীবনে প্রবেশ করা যেতে পারে। এই শিক্ষার বাইরেও শিক্ষা আছে। সেই শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যায় না, সেটা হল মনুষ্যত্বের শিক্ষা। সে কারণে আমাদের গুরুজনরা মানুষ হওয়ার কথা বলেন। যেটার কারণে মানুষ প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বলে দাবি করে।”

মায়া-মমতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, ভালোবাসা-স্নেহের মতো মানবিক গুণ না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না উল্লেখ করে আনিসুজ্জামান বলেন, “যখন ভালো ফলাফলধারী ভালো চাকুরের কাছ থেকে যখন ঘুষ-দুর্নীতি, শপথ ভঙ্গ আর স্ত্রী নির্যাতনের মতো অভিযোগ পাওয়া তখন বিদ্যা শিক্ষার সঙ্গে জীবনাচরণের মিল খুঁজে পাই না।”

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা

সমাবর্তনে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের স্বপ্ন আর জাতির স্বপ্ন একে অপরের পরিপূরক। বেকারত্বহীন, দারিদ্র্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও সন্ত্রাসহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে তোমাদের ভূমিকা হবে বিশাল। শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর কারিগর হিসাবে তোমাদের তারুণ্য শক্তির প্রতিষ্ঠান নিরঙ্কুশ হোক।”

তিনি বলেন, “দেশের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়নে তোমাদের প্রজন্মের সৃজনশীলতা আরও গতিময় হোক। এইভাবে নিরন্তর নতুনের জয়গানে খুলে যাক দেশ ও বহির্বিশ্বের সম্ভাবনাময় দুয়ারগুলো।”

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা এই উপাচার্য বলেন, “আমরা চাই, তুমি নিজেকে তুলে ধরবে এমন এক দৃষ্টান্ত হিসেবে যাকে অনুসরণ করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। তুমি চলে যাবে দেশ, কাল ও সামাজিক বৈষম্যের ঊর্ধ্বে। সকল নারী ও পুরুষের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠবে সোনার বাংলা।”

সমাবর্তনে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম এম শহিদুল হাসানও বক্তব্য দেন।