২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটির আশ্বাস ঢাবি উপাচার্যের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রী নিপীড়নে’ জড়িত আট ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কারের দাবিতে দিনভর আন্দোলনের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি করে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2018, 12:21 PM
Updated : 17 Jan 2018, 05:12 PM

তার ওই আশ্বাসের পর উপাচার্যের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ ও দাবিনামা জমা দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করে ফিরে গেছেন ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা।  

তাদের প্রতিনিধি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মাসুদ আল মাহদী বলেছেন, তাদের দাবি অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুজন প্রতিনিধিকেও তদন্ত কমিটিতে রাখতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা না হলে আগামী সোমবার থেকে শুরু হবে লাগাতার কর্মসূচি।

ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন একদল শিক্ষার্থী। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে আন্দোলনকারী এই শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ছাত্র মশিউর।

সোমবার এই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে সেখান থেকে মশিউরকে ভেতরে ঢুকিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতারা। পরে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে এক দিন আটকে রেখে মঙ্গলবার রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সেদিন ‘হামলাকারী’ ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রীদের নিপীড়ন করে বলেও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ। এর প্রতিবাদে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তারা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

দুদিন আগে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ‘হামলা’ ও ‘ছাত্রী নিপীড়নে’ জড়িত ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কার এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে তদন্ত কমিটি করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানান তারা।

ছাত্রলীগের ওই আট নেতাকর্মী হলেন- বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন রহমান, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি সোহানুর রহমান, মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, সূর্যসেন হলের সভাপতি গোলাম সারোয়ার, রোকেয়া হলের সভাপতি বি এম লিপি, ফজিলাতুন্নেসা হলের সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি, কুয়েত মৈত্রী হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা ও সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি শারজিয়া শারমিন শম্পা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও এ কর্মসূচিতে দেখা যায়। ওই কর্মসূচি শেষ করে বেলা ১টা দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে প্রক্টর অফিস ঘেরাও করেন।

শিক্ষার্থীদের আসতে দেখে ওই কার্যালয়ের গেইটে তালা আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তখন কলাপসিবল ফটকই ভেঙে ফেলেন।  

পরে প্রক্টর তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে কলাভবনের গেইটে উত্তেজিত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা এ সময় তাদের তিন দফা দাবি প্রক্টরের সামনে তুলে ধরেন। কেউ কেউ তার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানও দেন।

শিক্ষার্থীরা এ সময় ছাত্রলীগের ‘হামলা’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি অধ্যাপক রব্বানী।  ‘যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে তিনি ভেতরে চলে যেতে চাইলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তার পথরোধ করে প্রক্টর অফিসের গেইটে বসে পড়েন।

আন্দোলনকারীদের স্লোগানের মধ্যে প্রায় বিশ মিনিট সেখানে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকেন প্রক্টর। তারপর আধাঘণ্টার সময় চেয়ে নিয়ে নিজের কক্ষে যান।

আধা ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, “এটি তদন্ত করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করব। এজন্য সময় লাগবে, সাত দিন সময় দিতে হবে।”

সাত দিন কেন লাগবে- সেই ব্যাখ্যায় অধ্যাপক রব্বানী বলেন, “কমিটি তদন্ত করবে, প্রতিবেদন দেবে, তাতে সুপারিশ করবে। সে অনুযায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে এই সময় লাগবে।”

কিন্তু আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি তুহিন কান্তি দাশ তখন বলেন, “দুপুর থেকে একই ভাঙা রেকর্ড বাজাচ্ছেন, এটা বন্ধ করুন। ২৪ ঘণ্টার মধ্য নিপীড়কদের বহিষ্কার করে তারপর এখান থেকে যেতে হবে।”

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সে সময় উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ঘটনার দিনই বলেছি, যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করতে হয়। এগুলো তো তাৎক্ষণিক শুনে রিপোর্ট দেখে করা যায় না; নিয়মনীতি অনুসারে করতে হয়।

“এই ঘটনার বিচার করব; সেজন্য তো কাউকে অবরুদ্ধ করা গণতান্ত্রিক চেতনার মধ্যে পড়ে না। অবরুদ্ধ করে রাখা তো একজনের স্বাধীনতাকে হরণ করা, চেতনায় আঘাত হানা। এইটা তো ঠিক না।”

পরে বিকাল সোয়া ৩টা দিকে প্রক্টর তার কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে শিক্ষার্থীরা আবারও তার অফিসের বারান্দায় বসে পড়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেন।

বিকাল সোয়া ৪টার দিকে অধ্যাপক রব্বানী আন্দোলনকারীদের বলেন, “তোমাদের মধ্যে থেকে তিনজনের একটি প্রতিনিধি দল ঠিক কর। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে আসো।”

তুহিন কান্তি দাশ তখন আন্দোলনকারীদের সামনে ঘোষণা দেন, “প্রক্টর অপারগতা প্রকাশ করেছেন; তাই আমরা সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে যাব।”

এরপর প্রক্টরের সঙ্গে তারা উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। তাদের মধ্যে কয়েকজন ভেতরে যান, বাকিরা ফটকের বাইরে অবস্থান নেন।

শিক্ষার্থীদের তীব্র স্লোগানে এক পর্যায়ে উপাচার্য তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং তাদের বক্তব্য শোনেন। প্রক্টর গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল ও নীল দলের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজও এ সময় তার পাশে ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শুনে উপাচার্য তাদের বলেন, “আমাকে লিখিত আকারে অভিযোগগুলো দাও। আমি ব্যবস্থা নেব।”

তার ওই আশ্বাসের পর আন্দোলনকারীরা লিখিত আকারে তাদের দাবিগুলো উপাচার্যের কার্যালয়ে জমা দেন এবং ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ফিরে যান।