ডাকসু নির্বাচন করতে হবে ৬ মাসের মধ্যে

ছয় মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2018, 06:03 AM
Updated : 17 Jan 2018, 01:40 PM

আর ওই নির্বাচনের সময় যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তার দরকার হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সে বিষয়ে ‘যথাযথ সহযোগিতা’ দিতে বলেছে আদালত।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছয় বছর আগের একটি রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের বেঞ্চ বুধবার এই রায় দেয়।

দুই যুগ ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় প্রশাসনকে বাধ্য করতে ২০১২ সালে এই রিট আবেদন করেছিলেন ২৫ শিক্ষার্থী।

আদালত তখন রুল দিয়ে জানতে চেয়েছিল, ডাকসু নির্বাচন করার ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। সেই রুলের নিষ্পত্তি করেই বুধবার রায় দিল হাই কোর্ট। 

আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। 

রায়ের পর মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুল যথাযথ ঘোষণা করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।”

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা শুরু করে ডাকসু। প্রথমে পরোক্ষ নির্বাচন হলেও শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ডাকসু নির্বাচন শুরু হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর।

ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে ডাকসু এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা ছিলেন সামনের কাতারে। স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।  

প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভোট হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সে নির্বাচন হয়নি।

গতবছর ৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “ডাকসু ইলেকশন ইজ মাস্ট, তা না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে।”

আর বুধবার হাই কোর্টের আদেশের পর মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, “দীর্ঘ ২৭ বছরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় শুধু ছাত্ররাই তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়নি, বাংলাদেশও বঞ্চিত হয়েছে অনেক যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি থেকে।”

তিনি জানান, ডাকসু নির্বাচনের পদক্ষেপ নিতে প্রথমে ৩১ শিক্ষার্থীর পক্ষে ২০১২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও ট্রেজারারকে উকিল নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাড়া না দেওয়ায় ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে এই রিট আবেদন করা হয়।

সেখানে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের ২৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ডাকসু নির্বাচনের পর এর সময়সীমা হবে এক বছর। পরবর্তী তিন মাস নির্বাচন না হলে বিদ্যমান কমিটি কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। এ সিদ্ধান্তের পর ডাকসু ভেঙে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে; তাতে ছাত্রদল থেকে আমানউল্লাহ আমান ভিপি এবং খায়রুল কবির খোকন জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে এলেও তারপর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কেন্দ্র সিনেটে ছাত্রদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকছে না।

একই বিষয়ে আরেকটি রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৯ মার্চ রুল জারি করেছিল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং গত ২৬ বছরে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।

চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।