রোহিঙ্গাদের এখনই ফেরত পাঠানোয় আপত্তি অ্যামনেস্টির

মিয়ানমারে নীতির পরিবর্তন না হলে নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত পাঠানো নিরাপদ হবে না বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2018, 06:32 PM
Updated : 16 Jan 2018, 07:03 PM

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মঙ্গলবার নাইপিদোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে চুক্তি সই হওয়ার পর উদ্বেগ জানিয়ে এক বিবৃতিতে একথা বলেছে সংগঠনটি।

অ্যামনেস্টির দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চল বিষয়ক পরিচালক জেমস গোমেজ বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এখনও ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের দগদগে ক্ষত থাকায় তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা উদ্বেগ সৃষ্টির মতো ‘অপরিণত সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ’।

গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

সেনাবাহিনীর ওই অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে গত ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে দুই দেশের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে বলা হয়, প্রথম দফায় শুধু এবার আসা শরণার্থীদেরই ফেরত নেবে মিয়ানমার।

সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরের ৫৪ দিনের মাথায় দুই পক্ষ মঙ্গলবার ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চূড়ান্ত করেছে, যাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির লোগো। ছবি: অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইট থেকে

অ্যামনেস্টি বলছে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ওই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারবেন এমন কোনো নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়নি।

এত দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরা ‘ভয়ানক ভবিষ্যতের’ মুখে তাদের ফেলতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে স্বেচ্ছায়। যারা চাইবেন তাদেরই মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত পাঠানো হবে

গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।”

তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, “রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরা এবং সেখানে বসবাসের অধিকার রয়েছে। তবে বিদ্বেষপূর্ণ একটি ব্যবস্থায় লোকজনকে পাঠাতে তাড়াহুড়া করা যাবে না। জোরপূর্বক কাউকে ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন হবে।”

“বিদ্বেষপূর্ণ ব্যবস্থার অবসান এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জবাবদিহিসহ মিয়ানমারে মৌলিক পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরা নিরাপদ বা মর্যাদাপূর্ণ হতে পারে না।”