মশিউর থানায়; আটকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন

সাত কলেজকে অধিভুক্তির প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতা মশিউর রহমান সাদীকে আটকে রাখার কথা স্বীকার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2018, 05:42 PM
Updated : 16 Jan 2018, 05:42 PM

তবে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া তাকে এভাবে আটকে রাখা আইনের লঙ্ঘন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা এসেছে।

ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল একদল শিক্ষার্থী। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী’ব্যানারে আন্দোলনকারী এই শিক্ষার্থীদের নেতা মশিউর।

সোমবার এই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে সেথান থেকে মশিউরকে ভেতরে ঢুকিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতারা। তাকে মারধরের অভিযোগও ওঠে, যদিও ছাত্রলীগ নেতারা তা অস্বীকার করেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সরিয়ে দেওয়ার পর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “তাকে (মশিউর) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়েছে।”

রাত ১১টার পর থানায় যোগাযোগ করা হলে শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা (ডিউটি অফিসার) অমল দেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মশিউর রহমান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রকে এখন পর্যন্ত থানায় সোপর্দ করা হয় নাই।”

মঙ্গলবার রাতে মশিউরকে থানায় আটকে রাখার স্বীকারোক্তি আসে শাহবাগ থানায় থানার ওসি আবুল হাসানের কাছে থেকে।

তিনি বলেন, “সে থানায় আছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার অভিভাবককে খবর দেওয়া হয়েছে, উনারা আসলেই তাকে তাদের কাছে দিয়ে দেওয়া হবে।”

কী কারণে জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা কী কারণে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির এই ছাত্রকে থানায় দেওয়া হল, তা স্পষ্ট করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা পুলিশের কেউই।

মশিউরের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রক্টর মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ওকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে।”

এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাননি তিনি।

উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে এই বিক্ষোভ হয়েছিল মশিউর রহমানের নেতৃত্বে (বিকালের ছবি)

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউকে এনে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় থানায় আটকে রাখাকে আইনের লঙ্ঘন বলছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জোতির্ময় বড়ুয়া।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবিধান এবং ফৌজাদারি কার্যবিধিতে বলা আছে, কাউকে পুলিশি হেফাজতে ২৪ ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হলে তাকে আদালতে সোপর্দ করতে হবে।”

অভিভাবকের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, “যেহেতু সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, সেহেতু তার অভিভাবককে খোঁজাখুঁজির কোনো কারণ নেই। সে তো শিশু নয় যে তাকে অভিভাবকের কাছে দিতে হবে।

“সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তার নামে মামলার পর তাকে আদালতে হাজির করতে পারে। কিন্তু থানায় আটকে রাখার সুযোগ নেই।”

মশিউরের বাড়ি জামালপুরে যোগাযোগ করা হলে তার বড় ভাই সোহেল রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “আমার বাবাকে থানা থেকে ফোন দিয়ে বলেছে, অভিভাবক থানায় আসলে মশিউরকে ছেড়ে দেয়া হবে। আমি রাতেই ঢাকায় রওনা দেব। কাল (বুধবার) সকালে থানায় যাব।”

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মশিউর ফেইসবুকে একটি ইভেন্ট খোলার মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে অধিভুক্ত করে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এরপর থেকে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

এই অধিভুক্তি বাতিলের দাবি মশিউরদের; তারা বলছেন, কলেজগুলোর অধিভুক্তির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানামুখী ‘সমস্যা ও বিড়ম্বনার মধ্যে’ পড়ছে।