ওই দুধ যাতে শিশুদের না দেওয়া হয় সেজন্য ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। দূষিত শিশু খাদ্যটি জব্দে বাজার তদারকি দল করার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জেইএস ইন্টারন্যাশনালের অন্যতম মালিক জাওয়াদ আহমেদ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর তাদের আট হাজার কার্টন গুঁড়ো দুধ বাজার থেকে তুলে নিতে বলা হয়। সেখানে তারা তুলতে পেরেছেন মাত্র এক হাজার কার্টন।
প্রতি কার্টনে ২৪ টিন গুঁড়ো দুধ থাকে। সে হিসাবে এক লাখ ৯২ হাজার টিন দুধের মধ্যে প্রত্যাহার হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টিন।
বিশ্বে দুগ্ধ পণ্যের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি ল্যাকটালিসের পণ্য ১৭ বছর ধরে আমদানি করছে জেইস ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের বাজারে তারা এই দুধ ছাড়ছে বেবিকেয়ার ১ ও বেবিকেয়ার ২ নামে।
জাওয়াদ আহমেদ বলেন, “ডিসেম্বরে যখন সংবাদটি পাই কোম্পানি বলল সমস্যা মনে হচ্ছে, সেটা যেন বাজারজাত করা না হয়, গোডাউনে রাখা হয়। এরপর বলা হল, চারটি ব্যাচের দুধ মার্কেটে আছে সেগুলো রিকল করতে হবে। এগুলো কিন্তু সাসপেকটেড ছিল যে সালমোনেলা থাকতে পারে। সেগুলো ঢুকেছে (এসেছিল) জুলাই মাসে।
“২২ ডিসেম্বর কোম্পানির মাধ্যমে জানতে পারি তাদের পাঠানো কয়েকটি ব্যাচের দুধ মার্কেটে না রেখে রিকল করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে অধিকাংশ দুধ বিক্রিও হয়ে যায়। ধারণা করছি, ছয় মাসে প্রায় সাত হাজার কার্টন বিক্রি হয়ে গিয়েছে। মার্কেট থেকে প্রায় এক হাজার কার্টন দুধ রিকল করতে পেরেছি। সেগুলো এখন গোডাউনে আছে।”
ওই ব্যাচের গুঁড়ো দুধ বাজার থেকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশের গবেষণাগারে পরীক্ষার করে তাতে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হলে শিশুর ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি ও তীব্র পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এর প্রভাবে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
তবে এই গুঁড়ো দুধে কারও স্বাস্থ্যহানি ঘটলে কী করতে হবে সে বিষয়ে ল্যাকটালিসের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানান বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জাওয়াদ আহমেদ।
তিনি বলেন, “এখনও কোনো শিশু বাংলাদেশে অসুস্থ হয়েছে বলে অভিযোগ নেই। তাছাড়া এটা তো জুলাইয়ের প্রডাক্ট। ওটা তো (সালমোনেলা) ধরা পড়েছে ডিসেম্বরে।
“আমাদের প্রডাক্টের ব্যাপারে ফ্রান্স থেকে আসা রিপোর্টে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাচের দুধ বাজার থেকে সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। এই কোম্পানির সব গুঁড়ো দুধ সরিয়ে ফেলতে বলা হয়নি।”
তিনি একথা বললেও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে উৎপাদিত গুঁড়ো দুধ বিশ্বের ৮৩টি দেশের বাজার থেকে প্রত্যাহার করছে ল্যাকটালিস।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্রান শহরের সেলিয়া কারখানায় উৎপাদিত পণ্যে এই ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়েছে। সেখানে গত বছরের প্রথম দিকে সংস্কার কাজের সময় এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় বলে সন্দেহ করছেন তারা।
ওই কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্যের উপর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের কৃষিমন্ত্রী।
ফরাসি এই কোম্পনির গুঁড়ো দুধ পিকোট, মিলুমেল ও তারানিস ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে রয়েছে। তাদের গুঁড়ো দুধ খেয়ে ফ্রান্সে ৩৫ শিশু এবং স্পেনে এক শিশু অসুস্থ হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে কর্তৃপক্ষ। গ্রিসেও একটি শিশুর অসুস্থতা নিয়ে তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ল্যাকটালিসের গুঁড়ো দুধ বেবিকেয়ার ১ ও বেবিকেয়ার ২ যাতে বাজারে না থাকে সেটা মনিটর করার জন্য চার সদস্যের একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
“তারা যদি দেখে বাজারে ওই দুধ বিক্রি হচ্ছে তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই মনিটরিং দলের প্রধান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সচিব খালেদ হোসাইন বলেন, “এই পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করতে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো সরিয়ে ফেলতে ইমপোর্টারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ সম্পর্কে কাস্টমসকেও জানানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ও চাঁনখারপুলের দুটি গুদামে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১১ হাজার টিনের মতো গুঁড়োদুধ জব্দ করা হয়েছে।
এগুলো জেইএস ইন্টারন্যাশনালের বাজার থেকে তুলে নেওয়া এক হাজার কার্টন গুঁড়ো দুধের একাংশ বলে জাওয়াদ আহমেদ জানিয়েছেন।