যুদ্ধাপরাধ: পুঠিয়ার ফিরোজ খাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

রাজশাহীর পুঠিয়ার মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁর বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলা তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2018, 10:16 AM
Updated : 8 July 2019, 01:42 PM

তার বিরুদ্ধে চার সাঁওতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন ছাড়াও অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মত যুদ্ধাপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে চূড়ান্ত করা প্রতিবেদনটি এ বছরের প্রথম ও তদন্ত সংস্থার ৫৮তম তদন্ত প্রতিবেদন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পুঠিয়ার ভালুকগাছি ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলামের (মৃত) নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর হয়ে এ আসামি পুঠিয়া ও দুর্গাপুর এলাকায় এসব অপরাধ ঘটান।

রোববার ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। এসময় জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

হান্নান খান বলেন, “পুঠিয়ার বাঁশবাড়ী এলাকার মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁ মুক্তিযুদ্ধের আগে মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে শান্তি কমিটির স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হন।” 

জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, প্রতিবেদনে আসামি ফিরোজ খাঁর বিরুদ্ধে চারজন সাঁওতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন, ৮ থেকে ১০টি বাড়িঘর লুন্ঠনসহ ৫০ থেকে ৬০টি বাড়িঘর অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনায় পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে পুঠিয়া থানার ভালুকগাছী ইউনিয়নের সাঁওতাল পাড়ায় গিয়ে আসামি ফিরোজ খাঁ, পাকিস্তানি আর্মি ও তাদের সহযোগীরা স্বাধীনতার পক্ষের লাড়ে হেমব্রম, কানু হাসদা, জটু সরেন ও এবং টুনু মাড্ডিকে তরবারি দিয়ে কুপিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।”

এ আসামি ‘খুবই ধূর্ত’ মন্তব্য করে সানাউল হক বলেন, “তদন্তের সময় নাশকতার এক মামলায় গ্রেপ্তার হলে ফিরোজ খাঁকে পরে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি যুদ্ধাপরাধের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার পূর্বপুরুষ ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে আসা। মুক্তিযুদ্ধের পর সে পালিয়ে গিয়েছিল।”

তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন জানান, ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। তখন এ মামলায় আসামি ছিল ছয়জন। কিন্তু তদন্তকালে পাঁচ আসামির মৃত্যু হয়। চারটি ভলিউমে ৪০৯ পাতায় এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তদন্তের সময় ৪৪ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। যাদের প্রত্যেককেই ঘটনার সাক্ষী করা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা ও সাতজনকে জব্দ তালিকার সাক্ষী করা হয়েছে।