আখেরি মোনাজাত এবার বাংলায়

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোর থেকেই টঙ্গীর তুরাগতীরের পথে শুরু হয়েছে মানুষের ঢল।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2018, 04:27 AM
Updated : 14 Jan 2018, 06:08 AM

রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ব শান্তি কামনায় এই মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে তিন দিনের ইজতেমার প্রথম পর্ব।

আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন।

ইজতেমার মুরুব্বিরা জানান, সকালে ইজতেমা ময়দানে শুরু হয়েছে হেদায়েতি বয়ান। এবার হেদায়তি বয়ান করছেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন।

আর বেলা ১১টার দিকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম তাবলিগের শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের। এবার হেদায়তি বয়ান ও আখেরি মোনাজাত দুটোই হচ্ছে বাংলায়।   

আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা, পূবাইলের মিরেরবাজার ও আশুলিয়ায়ার আবদুল্লাহপুরে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মোনাজাতে অংশ নিতে মানুষ পায়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে পৌঁছাচ্ছে।

পাশাপাশি কালীগঞ্জ-টঙ্গী মহাসড়কের মাজুখান ব্রিজ থেকে স্টেশনরোড ওভারব্রিজ এবং কামারপাড়া ব্রিজ থেকে মুন্নু টেক্সটাইরের গেইট পর্যন্ত সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। গাজীপুর-ঢাকা গাড়ি চলাচলে বিকল্প পথ ধরতে হচ্ছে সবাইকে।

এদিকে ঢাকা থেকে অনেকেই ভোরের বিশেষ ট্রেন কিংবা বুড়িগঙ্গা হয়ে নৌপথে টঙ্গীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ কারণে ভোর সাড়ে ৫টার পর থেকে কমলাপুরে বেশ ভিড় ছিল বলে জানান ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াসির ফারুক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “টঙ্গীতে যাওয়ার জন্য সাতটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। পাশাপাশি অন্যান্য ট্রেনেও যাত্রীরা টঙ্গীর দিকে গেছেন।”

ভোর থেকে কেরানীগঞ্জের বরিশুর, কটকাদুর, মান্দাইল, জিঞ্জিরাঘাট এবং কামরাঙ্গীরচরের মাদবর বাজার ঘাট দিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে বিপুল সংখ্যক মানুষ টঙ্গী যান আখেরি মোনাজাতে যোগ দিতে।

সেলিম নামে একজন বলেন, “আমরা ট্রলারে করে মোনাজাতে যাব এবং ফিরব। দুপুরে একবেলা খাবারও দেবে। সব মিলিয়ে আড়াইশ টাকার মত খরচ পড়ছে।”

গত কয়েক বছর এভাবেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।

সকালে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে আখেরি মোনাজাতে যাওয়ার জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ভিড় দেখা যায়।

আজিমপুর মেটারনিটির সামনে শরীফ নামের একজন বলেন, তার একজন পরিচিত আগে রওনা দিয়েও মহাখালীর পরে আর বাস যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরাগামী বিকাশ পরিবহনে চালকের সহকারী চঞ্চল বলেন, “আমরা ইজতেমা পর্যন্ত যেতে পারি না, বনানী পর্যন্ত যেতে পারি। বড়জোর বিশ্বরোড পর্যন্ত যাওয়া যায়, এরপর ঘুরিয়ে দেয়।”

উত্তরায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক সালাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উত্তরা এলাকায় বাস ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও অন্যান্য বাহনে করে অনেকে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসছেন।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন আর রশিদ জানান, আখেরি মোনাজাতের পর মানুষের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় সাত হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

এ সপ্তাহের শেষে আগামী শুক্রবার শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। একইভাবে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ২১ জানুয়ারি শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।