যুদ্ধাপরাধ: বিচারে আসছে রনদা প্রসাদ সাহার ‘খুনি’

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লাশ গুমের অপরাধে টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2018, 06:15 PM
Updated : 27 June 2019, 07:27 AM
প্রসিকিউশন এই আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছে।

চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বৃস্পতিবার তিনটি অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।

রানা দাশগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ট্রাইব্যুনাল আমলে নিবে কি না, সে বিষয়ে আদেশের জন্য ৩১ জানুয়ারি আদেশের রেখেছে।”

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাসহ ৬২ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে মাহবুবের বিরুদ্ধে।

৬৯ বছর বয়সী মাহবুব একাত্তরে মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি বৈরাটিয়া পাড়ার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। আসামি মাহবুব ও তার ভাই আব্দুল মান্নান রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।

মাহবুব একসময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন বলে তদন্ত সংস্থার ভাষ্য । তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।

২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হলে ওই বছরের নভেম্বরে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

গত বছরের ২ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান।

তার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সমম্বয়ক সানাউল হক।

হান্নান খান বলেছিলেন, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়।

“তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ ৭ জনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।”

মানবহিতৈষী কাজে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকায় ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল রণদা প্রসাদ সাহাকে। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়। তিনি আর পি সাহা নামেও সমধিক পরিচিত।

রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা; থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে।

সানাউল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটন করে।

মামলাটি তদন্ত করেছেন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান। দেড় বছরেরও বেশি সময়ের তদন্তে তার বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এই তদন্ত কর্মকর্তা জানান।

সানাউল হক বলেছিলেন, তদন্তকালে ৬০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে এবং মোট ১০০ পাতার নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলে চার ভলিউমে ৩৮০ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।