তাবলিগের দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির ঢাকায় আসা নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2018, 10:13 AM
Updated : 11 Jan 2018, 01:52 PM

বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টা পর মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক শুরু হয় বলে কর্মকর্তারা জানান।   

এই উত্তেজনার মধ্যে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে অবস্থানরত মাওলানা সাদ টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় যাচ্ছেন না বলে সকালেই ইংগিত দেওয়া হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।

সাদবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে নতুন করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কাকরাইল মসজিদ এলাকায় বুধবার রাত থেকেই নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। 

তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশে আসেন এই মুসলিম সংঘের কেন্দ্রীয় পর্ষদের শুরা সদস্য মাওলানা সাদ।

তার ইজতেমায় যাওয়া ঠেকাতে তাবলিগ জামাতের একটি অংশ বিমানবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করলে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে দিনভর যানজটে ভুগতে হয় মানুষকে। 

ভারতীয় উপমহাদেশের সুন্নি মতাবলম্বী মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূল কেন্দ্র বা মারকাজ দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় ওই পর্ষদকে বলা হয় নেজামউদ্দিন, যার ১৩ জন শুরা সদস্যের মাধ্যমেই উপমহাদেশে তাবলিগ জামাত পরিচালিত হয়।

এই পর্ষদের সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি সম্প্রতি নিজেকে তাবলিগের আমির দাবি করে বসেন। ফলে তার বাংলাদেশে আসা নিয়ে বাংলাদেশে তাবলিগের মূল দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।

বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিকালে কাকরাইল মসজিদে যান মাওলানা সাদ। বাংলাদেশে ওই মসজিদই তাবলিগের কার্যক্রমের মূল কেন্দ্র।

সন্ধ্যায় সাদবিরোধী একদল তাবলিগকর্মী কাকরাইল মসজিদের সামনে জড়ো হলে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। ওই মসজিদ ঘিরে অবস্থান নেয় পুলিশ, সকালে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সকালে ওই এলাকার পরিস্থিতি দেখতে যান। পরে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাওলানা সাদ শুক্রবার সকালে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ভাগে যোগ দিতে যাচ্ছেন না।

এ দিকে সকালে ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো.আনোয়ার লতিফ খান সাংবাদিকদের বলেন, “মাওলানা সাদকে নিয়ে যে বিতর্ক আছে এটা উভয় পক্ষকে নিয়ে প্রশমনের চেষ্টা উঁচু পর্যায়ে চলছে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে জানতে পেরেছি, উনি সম্ভবত এখানে আসবেন না। তারপরও সরকারিভাবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ওটাই আমরা সবাই মেনে চলব এবং তা নিশ্চিত করব।”

এক প্রশ্নের জবাবে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “উভপক্ষকে নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে মিটিং হচ্ছে। একটা সুন্দর সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে। আমি আশাবাদী এটা নিয়ে কোন গণ্ডগোল হবে না।”

দুপুরে মহাখালির আইপিএইচ স্কুল ও কলেজের পঞ্চাশ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তিনি বলেন, মাওলানা সাদ বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন কি না, তা নির্ভর করবে তাবলিগ জামায়াতের মুরুব্বিদের সিদ্ধান্তের ওপর। সরকার শুধু আইন শৃঙ্খলার দিকটি দেখবে।

মাওলানা সাদকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত নভেম্বরে কাকরাইল মসজিদে দুই দল তাবলিগকর্মীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে তাবলিগের ‘মুরুব্বিরা’ ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে একটি উপদেষ্টা কমিটি করেন।

ওই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড- বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আল্লামা আব্দুল কুদ্দুছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমাদের উপদেষ্টা কমিটির পাঁচ সদস্যই মনে করেন, মাওলানা সাদের চলে যাওয়াই উচিৎ।”

এই কমিটির অপর সদস্যরা হলেন-মালিবাগ শারাইয়া মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী, যাত্রাবাড়ী জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মাহমুদুল হাসান, শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ও মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মালেক।

সাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বের কাতারে থাকা বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারাও ‘বিভিন্ন মাধ্যম থেকে’ জেনেছেন, ইজতেমায় যাচ্ছেন না মাওলানা সাদ।

মাওলানা সাদের বিরোধিতার কারণ জানতে চাইলে বলেন মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, “এক কথায় বললে উনি কোরাআনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। রাসুল (স.) সম্পর্কে বিষোদগার ছড়াচ্ছেন।”

মাওলানা সাদ গত কয়েকবছরও বাংলাদেশে ইজেতেমায় যোগ দিয়েছেন এবং ইমামতি করেছেন। তখন কেন আপত্তি তোলা হয়নি- এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল  মুফতি ফয়জুল্লাহকে।

জবাবে তিনি বলেন, “আগে থেকেই এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যাতে ভুল ব্যাখ্যা না করেন। দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকেও তাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু উনি তার অবস্থানে অনড়।”

শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচারের জন্য সুপরিচিত তাবলিগ জামাতের কর্মীদের অনেকটা নজিরবিহীনভাবে রাজপথে বিক্ষোভে নামার পেছনে হেফাজতে ইসলামের ইন্ধন আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, “ওলামায়ে কেরাম, যারা ইসলামী ধ্যান ধারণা ধারণ করেন- তারাই আন্দোলন করছেন। এর সাথে হেফাজতের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”

অন্যদিকে মাওলানা সাদের পক্ষে থাকা তাবলিগের মুরুব্বি মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা আন্দোলন করছেন, বিশৃঙ্খলা করছেন, হুজুরের বিরোধিতা করছেন- তাদের সাথে বৈঠক হচ্ছে পুলিশের মধ্যস্থতায়। তারপরই হয়ত আপনাদের বলতে পারব মাওলানা সাদের বিষয়ে।”