পুলিশ সপ্তাহের আগে আলোচনায় ডিআইজি মিজান

পুলিশ সপ্তাহ শুরুর আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার খোরাক এখন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অবস্) মিজানুর রহমান।

অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2018, 06:18 PM
Updated : 8 Jan 2018, 05:49 AM

এক নারী ‘তুলে নিয়ে বিয়ে করার’ অভিযোগ তোলার পর মিজানুরকে নিয়ে এই আলোচনা; যদিও ডিআইজি পদমর্যাদার এই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, ওই নারী প্রতারক।

সোমবার পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। তা নিয়ে পুলিশ বিভাগে ব্যস্ততার মধ্যে রোববার গণমাধ্যমে মিজানের বিরুদ্ধে ওই নারীর অভিযোগ আসে।

অতিরিক্ত উপকমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল (শনিবার) রাতেও বলছিলাম, এবার পুলিশ সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত কোনো নিউজ নেই, ভালোই হল।

“তখন একজন কনস্টেবল বলেছিল, ‘স্যার এখনও ২৪ ঘণ্টা বাকি আছে’। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না যেতেই সকালে দেখি এই খবর।”

ওই নারী একটি সংবাদপত্রকে বলেন, পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের কাছে তার বাসা। সেখান থেকে কৌশলে গত বছরের জুলাই মাসে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মিজান। পরে বেইলি রোডের মিজানের বাসায় নিয়ে তিনদিন আটকে রাখা হয়েছিল তাকে।

ওই নারী দাবি করেছেন, আটকে রাখার পর বগুড়া থেকে তার মা’কে ১৭ জুলাই ডেকে আনা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখেন ইতোপূর্বে বিবাহিত মিজান।

এই নারীর অভিযোগ, কয়েক মাস কোনো সমস্যা না হলেও ফেইসবুকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি ছবি তোলার পর ক্ষিপ্ত হন মিজান। ভাংচুরের ‘মিথ্যা’ একটি মামলা দিয়ে তাকে গত ১২ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর মিথ্যা কাবিননামা তৈরির অভিযোগে আরেকটি মামলা করানো হয়।

দুটি মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসার পর পুলিশ কর্মকর্তা মিজানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন ওই নারী।

মগবাজারের কাজী অফিসের কাজী মাওলানা সেলিম রেজা ভুয়া কাবিননামা তৈরির অভিযোগে ওই নারীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে আদালতের নির্দেশে তা রমনা থানা পুলিশ নথিভুক্ত করে।

ওই মামলাটির তদন্ত চলছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ডিএমপির উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান

 

ডিএমপি সদর দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার সকালে সংবাদটি প্রকাশের পর অতিরিক্ত কমিশনার মিজানকে বেশ অস্থির মনে হয়েছে।

মিজান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’।

“আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার ভালো বোঝাপড়া। আমরা পারিবারিক জীবনে সুখী। আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য স্বামী বানিয়ে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে।”

অভিযোগকারী নারীকে ‘প্রতারক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ওই নারী ২০১৫ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছিলেন। সেই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয়।

ওই নারীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় ভাংচুরের মামলার বিষয়ে মিজান বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই এই নারী বেইলী রোডের তার ভাইয়ের বাসায় জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। তখন থানায় একটি মামলা হয়। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর এটি এখন বিচারাধীন।

ওই নারী কেন ওই বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি পুলিশ কর্মকর্তা মিজান।

তিনি দাবি করেন, ওই নারী সেসব অভিযোগ করেছিলেন, তা ইতোমধ্যে প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন।

তবে মিজানের এই বক্তব্য নিশ্চিত হতে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।   

মিজানের এই বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় কোনো তদন্ত হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ সপ্তাহের পরে হয়ত এসব বিষয় নিয়ে কথা উঠতে পারে।”