কথাসাহিত্যিক শওকত আলী ‘সঙ্কটাপন্ন’

রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2018, 07:59 AM
Updated : 6 Jan 2018, 03:53 PM

৮১ বছর বয়সী এই সাহিত্যিক ল্যাব এইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তার ছেলে আসিফ শওকত কল্লোল শনিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবা এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।”

শওকত আলীর ছোট ভাই ডা. ওসমান আলী হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “তার রক্তচাপ কমে গেছে, কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না এবং ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এছাড়া আগে থেকেই হৃদযন্ত্রে সমস্যা ছিল। এর বাইরে অসুস্থতার মধ্যেই স্ট্রোক হওয়ায় মস্তিস্কও যথাযথভাবে কাজ করছে না।”

শওকত আলীকে ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তার শারীরিক অবস্থা এতই নাজুক যে দেশের বাইরে নেওয়াও সম্ভব নয়।”

বাবার অসুস্থতার খবর শুনে শওকত আলীর বড় ছেলে আরিফ শওকত পল্লব শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শওকত আলীকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ল্যাব এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) নেওয়া হয়। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।

তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ল্যাব এইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যায় তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে শওকত আলীর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন।

১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার থানা শহর রায়গঞ্জে জন্ম নেওয়া শওকত আলী ছাত্র জীবনে কমিউনিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও কিছুদিন পরে শিক্ষকতায় যোগ দেন তিনি।

বামপন্থিদের ‘নতুন সাহিত্য’ পত্রিকায় লেখালেখি করেন শওকত আলী। এছাড়া দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল, ইত্তেফাকে তার অনেক গল্প, কবিতা ও শিশুতোষ লেখা প্রকাশিত হয়।

কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে একুশে পদক পান শওকত আলী। পরে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার, অজিত গুহ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার পান।

‘দক্ষিণায়নের দিন’, ‘কুলায় কালস্রোত’ এবং ‘পূর্বরাত্রি পূর্বদিন’ উপন্যাসত্রয়ীর জন্য তিনি ‘ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার’ পান।

তার অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে, ‘পিঙ্গল আকাশ’, ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, ‘অপেক্ষা’, ‘গন্তব্যে অতঃপর’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘অবশেষে প্রপাত’, ‘জননী ও জাতিকা’, ‘জোড় বিজোড়’।

‘উন্মুল বাসনা’, ‘লেলিহান সাধ’, ‘শুন হে লখিন্দর’, ‘বাবা আপনে যান’সহ বেশ কয়েকটি গল্পগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন তিনি।